বরাহনগর মঠে ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের পূজার ঘর স্থাপনা।

 বরাহনগর মঠে ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের পূজার ঘর স্থাপনা।

বরাহনগর মঠে ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের পূজার ঘর স্থাপনা।


সুরেশ মিত্রের ঠাকুর- ঘরেতে আপত্তিঃ- 

সুরেশচন্দ্র মিত্রের ঠাকুরঘর করিতে আপত্তি ছিল। তিনি ইহাকে দোকানদারি বলিয়া মনে করিতেন। তিনি ঠাট্টা করিয়া বলিতেন, “শ্যালারা করবি কি; যেমন শীতলাঠাকুর বসায়, তেমনি ঠাকুরের ছবি রেখে ঘণ্টা বাজাবি আর পুজুরিগিরি করবি? তার চেয়ে ঠাকুর ঘর না করাই ভাল।” নরেন্দ্রলাথ বলিতেন, “দ্যাখ আমরা সন্ন্যাসী, কোথায় খাব, কোথায় থাকব, ঠিক নেই। ঠাকুর ঘর ক'রে মিছে বিব্রত করিস নে" ঠাকুরঘর কল্লে একটীকে নিজস্ব থাকতে হবে, আর অনেক চিন্তায়ও থাকতে হয়। তার চেয়ে ঠাকুরের আদর্শ সামনে রেখে সাধনা করাই শ্রেয়ঃ” 

শশী মহারাজের ঠাকুর ঘর স্থাপনাঃ-

কিন্তু শশী মহারাজ প্রগাঢ় ভক্তিসহকারে সমস্ত ভার নিজে লইতে সম্মত হইলেন এবং তিনিই ঠাকুর স্থাপন ও পূজার বিধি প্রণয়ন করিলেন। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব শরীর থাকিতে যে যে সময়ে যে যে কার্যটী করিতেন এবং যে বস্তুটা ভোজন করিতেন, শশী মহারাজ তাহাকে প্রত্যক্ষ স্বশরীরে বর্তমান বোধ করিয়া সেইরূপভাবে ভোগ, পান ও তামাক দিতে লাগিলেন। মন্ত্র হইল, “জয় গুরুদেব, শ্রীগুরুদেব” “জয় গুরুদেব, শ্রীগুরুদেব” ইত্যাদি এবং গুরুর স্তব পাঠ করিতেন। আর রাত্রিকালে শশী মহারাজ যখন পঞ্প্রদীপ নাড়িতেন ও মুখে “জয় গুরুদেব, শ্রীগুরুদেব” শব্দ উচ্চারণ করিতেন, তখন তাঁহার কন্ঠ হইতে এক গন্তীরনাদ বাহির হইত। তিনি বিভোর, উন্মত্ত ও গম্ভীরস্বরে শব্দটী এরূপভাবে উচ্চারণ করিতেন যে দিঙ্মগুল কম্পিত হইত এবং সেই গম্ভীর শব্দ বহুদূর হইতে শ্রুত হইত। গৃহপ্রাচীর ও জানালা সমূহে সেই নাদ প্রতিধবনিত হইত। এরূপ একাগ্রচিত্তে, উম্মত্তভাবে পুজা করিতে অতি অল্পই দৃষ্ট হয়। শশী মহারাজের বয়স তখন পঁচিস-ছাব্বিস বৎসর; দেহ লম্বা ও পাতলা ছিপছিপে, শ্মশ্রুও অল্প অল্প আছে এবং বর্ণ গৌর। শেষ বয়সের যে স্থুলকায় চেহারা, যুবাবয়সে তাহা ছিল না। সম্ভবতঃ ১৮৮৬ সালের আশ্বিন-কার্তিক মাসে বরাহনগর মঠের প্রারম্ভ; এই সময় এইরূপ একটা স্থান নির্দিষ্ট হওয়াতে সকলে আসিয়া মিলিতে লাগিলেন এবং তারকনাথ প্রধান হইয়া সকলকে দেখিতে লাগিলেন। তারকনাথকে আহ্লাদ করিয়া সকলেই “মহাপুরুষ” বলিতেন এবং বিশেষ শ্রদ্ধাভক্তিও করিতেন। এই বরাহনগরের মঠেই বাইবেল, তদ্ব্যতীত প্রজ্ঞা-পারমিতাদি বৌদ্ধগ্রন্থ পাঠ, বেদান্ত ও হিন্দুশাস্ত্রাদির আলোচনা এবং যথাসম্ভব সাধন, ভজন ও কঠোর তপস্যা আরম্ভ হইল।

গ্রন্থসূত্রঃ-শ্রীমৎ বিবেকানন্দ স্বামীজীর জীবনের ঘটনাবলী, প্রথম খণ্ড

Post a Comment

0 Comments