~ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ অনুধ্যান ~
শ্রী মহেন্দ্রনাথ দত্ত
নিবেদন
পরমহংস মশাই মাঝে মাঝে, বােধ হয় ১৮৮২ বা ১৮৮৩ খৃষ্টাব্দের মধ্যভাগ হইতে ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দের মধ্যভাগ পর্যন্ত, রামদাদার বাড়িতে আসিয়া অনেক কথাবার্তা কহিয়াছিলেন। আমি যদিও অনেক সময় সেখানে উপস্থিত থাকিতাম, কিন্তু তখন আমার বয়স অল্প হওয়ায়, সেই সকল কথার অর্থ বিশেষ বুঝিতে পারি নাই; আর, অনেক দিনকার ঘটনা হওয়ায়, এখন সেই সকল কথা বার্তা বিশেষ কিছু স্মরণও নাই। বােধ হয়, অপরেও সেই সকল কথাবার্তা বিশেষ কিছু স্মরণ করিয়া রাখেন নাই, বা সেই সম্বন্ধে বিশেষ কিছু লিখিয়া যান নাই। সেই সকল ঘটনার যে বিশেষ কোনাে সার্থকতা আছে, এবং পরে যে সেগুলির বিশেষ কোনাে মূল্য হইবে, এ বিষয় তখন কেহ চিন্তাও করেন নাই। সকলেই এই সকল ঘটনা অতি সাধারণ ব্যাপার মনে করিতেন বলিয়া, পরমহংস মশাই-এর কথাবার্তা বিশেষ মন দিয়া শুনেন নাই, বা বিশেষ কিছু লিখিয়া রাখেন নাই। এইজন্য, এ বিষয় অতি সামান্য ভাবে যাহা আমার স্মরণ আছে, তাহা এ স্থলে বিবৃত করিতে চেষ্টা করিয়াছি; আর, সেই সময় পরমহংস মশাই-এর যেরূপ ভাব-ভঙ্গী দেখিয়াছি, এবং তাহা দেখিয়া, আমার মনে যে প্রকার ভাবের উদয় হইত, তাহা ব্যক্ত করিতে প্রয়াস পাইয়াছি। অনেক দিনকার পুরানাে কথা হওয়ায়, প্রত্যেক বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে মনে আনিতে পারিতেছি না; তবে যেটুকু পারিতেছি ও ঠিক বলিয়া বােধ হইতেছে, কেবল সেইটুকুই বিবৃত করিতেছি। ঠিক পর পর কোন দিন কি ঘটিয়াছিল, এবং কথাবার্তাকালে, পরমহংস মশাই বা অন্য কেহ, ঠিক যে কি ভাষা ব্যবহার করিয়াছিলেন, তাহাও স্মৃতিতে আনিতে পারিতেছি না। এইজন্য, বিবৃত ঘটনাগুলির আগু-পাচ্ছু হইয়া যাওয়া সম্ভব এবং কথাবার্তার ভাষাও বদলাইয়া যাওয়া সম্ভব। যে সকল ঘটনা আমি নিজ চক্ষে দেখি নাই, সেগুলি অপরের মুখে যেমন শুনিয়াছি, তেমন লিখিয়াছি; কিন্তু, সকল ক্ষেত্রে তাহাদের নাম উল্লেখ করা সম্ভব হয় নাই।
এই গ্রন্থের পূর্ব ভাগে, অন্যান্য বিষয়ের সহিত, পরমহংস মশাই-এর জীবনের কতকগুলি ঘটনা ও প্রক্রিয়ার বিষয় সন্নিবেশ করা হইয়াছে, কিন্তু সেগুলি বিশ্লেষণ করা হয় নাই। পরমহংস মশাই-এর ক্রিয়াকলাপ বিশ্লেষণ করিলে, তিনি যে এক অতীব মহান দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ছিলেন, তাহা বেশ স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় ; কারণ, তিনি নিজ অনুভূত বহু নূতন দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক সত্যের জীবন্ত রূপ দিয়াছিলেন। পরমহংস মশাই-এর ক্রিয়াকলাপ অনুধাবন করিলে অনেক প্রকার নূতন দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক সত্য উপলব্ধি করিতে পারা যায়। এইজন্য, আমি দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক মতের সাহায্যে তাহার ক-একটি মাত্র অতি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করিতে প্রয়াস পাইয়াছি, কারণ, সবগুলি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করিতে হইলে স্বতন্ত্রভাবে বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করা আবশ্যক। আমি যেগুলি বিশ্লেষণ করিয়াছি, সেগুলি গ্রন্থের উত্তর ভাগে লিপিবদ্ধ করিয়াছি। ইহাতে যদি ভ্রম হয়, তবে সে ক্রটি আমার। কারণ আমার ক্ষুদ্র শক্তিতে ও সামান্য বুদ্ধিতে তাহার সম্বন্ধে অল্পমাত্র যাহা বুঝিয়াছি, তাহাই এ স্থলে প্রকাশ করিয়াছি।
পরমহংস মশাই-এর মতাে আদর্শপুরুষের বিষয় কোনাে কিছু বলা অতীব দুরুহ। পরমহংস মশাই-এর যে বহুবিধ ভাব ও বহুবিধ শক্তি ছিল, আমরা সে সকল কিছুই নির্ণয় করিতে পারি নাই। ভক্তিমার্গের লােকেরা তাহাকে মহাভক্ত বলিতেন; জ্ঞানমার্গের লােকেরা তাঁহাকে মহাজ্ঞানী বলিতেন; দার্শনিকগণ তাহাকে দর্শনশাস্ত্রের প্রতিমূর্তি বলিতেন ; বৈজ্ঞানিকগণ তাহাকে বিজ্ঞানশাস্ত্রের প্রমাণপুরুষ বলিতেন এবং অন্যান্য মতাবলম্বিগণও তাহাকে নিজ নিজ মতের আদর্শপুরুষ বলিয়া গ্রহণ করিতেন। পরমহংস মশাই-এর বিষয় অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত হইয়াছে সত্য, কিন্তু আরাে অধিকসংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশ করা আবশ্যক। কারণ, তাহা হইলে, তাহার জীবনী বিশদভাবে আলােচিত হইতে পারে এবং বিভিন্ন দিক হইতে তাহাকে বুঝিবার চেষ্টা করা যাইতে পারে।
এই গ্রন্থ পাঠে যদি কাহারাে কিছুমাত্র উপকার হয়, তাহা হইলে, আমার শ্রম সার্থক হইল মনে করিব।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্মতিথি
১২ ফাল্গুন, শুক্রবার, ১৩৫০
৩, গৌরমােহন মুখার্জি স্ট্রীট
কলিকাতা
বিনীত,
শ্রী মহেন্দ্রনাথ দত্ত
![[PDF] শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ অনুধ্যান - শ্রী মহেন্দ্রনাথ দত্ত [PDF] শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ অনুধ্যান - শ্রী মহেন্দ্রনাথ দত্ত](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjbzTaugffkqPHZd1_t0aFgwzbh_KXVgsN0vHtM3ZElNW_xWaIPbS5XDw_TTplocUhdiIQyHaF0tm4lyWddvCbRNdyOVl6FpAeF72DG6T6HRI1ZeEcRj5Lmqgv8wiXyYZ_ynoWIKZ8k7VzL/s16000-rw/15.jpg)
0 Comments