নরেনের মনটা যেন ময়দার তালের মতন... ...লাটু মহারাজ বলিলেন।

নরেনের মনটা যেন ময়দার তালের মতন।

নরেনের মনটা যেন ময়দার তালের মতন... ...লাটু মহারাজ বলিলেন।

নরেন্দ্রনাথের আবার আইনের পুস্তক পড়িতে আরম্ত করা।

নরেন্দ্রনাথ রামতনু বসুর গলির বাড়ীতে ফিরিয়া আবার আইনের পুস্তক খুলিয়া পড়িতে লাগিলেন। পরীক্ষার আর অল্পদিন বাকী আছে। দরজা সব বন্ধ রাখিতেন, পাছে কেহ আসিয়া বিরক্ত করে। কিন্তু বই খুলিয়া অনেক সময় উন্মনা হইয়া থাকিতেন, শৃন্য দৃষ্টি, স্থির নেত্র। একদিন বেলা প্রায় তিনটার সময় হুটকো গোপাল আসিয়া দরজায় ধাক্কা মারিতে লাগিলেন। নরেন্দ্রনাথ গৃহাভ্যন্তর হইতে কোন উত্তর করিলেন না। শেষকালে গোপাল বলিলেন, “ভাই, তোকে একটু তামাক সেজে খাওয়াতে এসেছি, দোরটা খোল না।”

নরেন্দ্রনাথ বড় তামাকপ্রিয় ছিলেন। সাতপাঁচ ভাবিয়া দরজাটা খুলিলেন। গোপাল গৃহে প্রবেশ করিয়া একথা ওকথার পর কাশীপুরের কথা তুলিলেন। এদিকে নরেন্দ্রনাথের পুস্তকও বন্ধ হইয়া গেল। দুই জনে বাহির হইয়া পড়িলেন। গোপাল বলিলেন, “শরৎ ও শশী বাড়ীতে আছে। দোরের দিক্ দিয়ে গেলে শরতের বাপ টের পাবে, ওকে জানলার দিক্ দিয়ে ডাকি গিয়ে।” শরৎ মহারাজ বাড়ীতে ছিলেন, জানাল দিয়া চাদরটা ও জুতাটা ফেলিয়া দিলেন, গোপাল তুলিয়া লইলেন এবং রাস্তায় যেন কোন কার্যে যাইতেছেন এই ছলে বাহির হইয়া আসিলেন। ক্রমে তিনজনে একত্র হইলেন। তিনজনে একত্রেই কখন মাষ্টার মহাশয়ের বাড়ী, কখনও গিরিশ বাবুর বাড়ী, কখনও বা বলরাম বাবুর বাড়ীতে যাইতেন। কখনও বা লাটু মহারাজ আসিয়া রামতনু বসুর গলিতে নরেন্দ্রনাথের কাছে বসিয়া থাকিতেন এবং নরেন্দ্রনাথকে টানিয়া লইয়া যাইতেন।

একদিন লাটু মহারাজ রামতনু বসুর বাটীর ঘরটাতে বসিয়া নরেন্দ্রনাথের মাতাকে নরেন্দ্রনাথের বিষয় বলিতে লাগিলেন যে, “দেখুন, নরেনের মনটা যেন ময়দার তালের মতন। যে রকম ভাবে গড়ুন, সেই রকম ভাবেরই হয়।” অর্থাৎ মহাশক্তি ভিতরে রহিয়াছে । যে দিকে যখন লাগাইতেছে তখন সেই দিকেই নূতনত্ব দেখাইতেছে।

গ্রন্থসূত্রঃ-শ্রীমৎ বিবেকানন্দ স্বামীজীর জীবনের ঘটনাবলী, প্রথম খণ্ড

গ্রন্থসূত্রঃ-০২২

Post a Comment

0 Comments