[ebook] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনাঃ ষষ্ঠ খণ্ড

 স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনাঃ ষষ্ঠ  খণ্ড 

[ebook] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনাঃ ষষ্ঠ  খণ্ড

প্রকাশকের নিবেদন

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনার ষষ্ঠ খণ্ডে ‘ভাববার কথা’, ‘পরিব্রাজক’, ‘প্রাচ্য, ও পাশ্চাত্য’‘বর্তমান ভারত’-নামক ইতঃপূর্বে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত স্বামীজীর বাংলা মৌলিক রচনাবলী ও তৎসহিত তাঁহার রচিত সংস্কৃত স্তোত্র ও বাংলা কবিতাগুলি এবং ১২৮ খানি পত্র (বাংলা ও ইংরেজী অনুবাদ) সন্নিবেশিত হইয়াছে। 

‘ভাববার কথা’ পুস্তিকাটি ‘হিন্দুধর্ম ও শ্রীরামকৃষ্ণ’, ‘রামকৃষ্ণ ও তাঁহার উক্তি’, ‘বাঙ্গালা ভাষা’, ‘বর্তমান সমস্যা’ প্রভৃতি কয়েকটি প্রবন্ধ ও সমালােচনার সংগ্রহ। Thomas a Kempis-এর Imitation of Christ' নামক পুস্তকের অসমাপ্ত অনুবাদও ইহার সহিত সংযােজিত হইয়াছে। এইসকল প্রবন্ধের অধিকাংশই ইতঃপূর্বে’ উদ্বোধনে’ প্রকাশিত। 

‘পরিব্রাজক’ পুস্তকটি দ্বিতীয়বার পাশ্চাত্য-ভ্রমণকালে স্বামীজীর চিন্তার একটি ডায়েরী। ‘উদ্বোধন’-সম্পাদকের দ্বারা অনুরুদ্ধ হইয়া মনোরঞ্জনকারী ভ্রমণকাহিনী রূপে স্বামীজী উহা লিখিতে আরম্ভ করেন। কিন্তু বিশ্ব ইতিহাসে অগাধ জ্ঞান সম্পন্ন স্বামীজীর লেখনীতে উহা মধ্যপ্রাচ্য ও ইওরােপের  ইতিহাস ও সভ্যতার একটি ছােটখাটো সমালােচনায় পরিণত হইয়াছে। সর্বোপরি যে-সব দরিদ্র অবহেলিতদের কায়িক পরিশ্রমের উপর ঐ-সকল সভ্যতা গড়িয়া উঠিয়াছিল, স্বামীজী এই পুস্তকে তাঁহার অনুপম ভাষায় তাহাদের প্রতি অকৃত্রিম সহানুভূতি প্রদর্শন করিয়াছেন, এবং কালক্রমে ‘রক্তবীজের প্রাণিসম্পন্ন’ মহাধৈর্যশীল দরিদ্র শ্রমিকগণই যে জগতে আধিপত্য  বিস্তার করিবে, স্বামীজী তাহারও ইঙ্গিত করিয়াছেন। 

 ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ উদ্বােধন-পত্রিকায় প্রবন্ধাকারে ধারাবাহিক রূপে প্রকাশিত হইয়া পরে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। দীর্ঘকাল ব্রিটিশ শাসনে পাশ্চাত্য সভ্যতার মােহে তখন পরাধীন ভারতবাসীর চক্ষু ঝলসিত। স্বদেশ ও বিদেশের বহু স্থান ভ্রমণ করিয়া স্বামীজী প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে পর্যবেক্ষণ করিয়াছেন। উদার দৃষ্টি সহায়ে উভয় সভ্যতার যাহা ভাল লক্ষ্য করিয়াছেন, তাহাই তিনি এই পুস্তকে উপস্থাপিত করিয়াছেন এবং উভয় সভ্যতার দোষগুলি ছাড়িয়া গুণগুলি সংগ্রহ করিবার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান করিয়াছেন।

‘বর্তমান ভারত’ মানবজাতির উত্থান-পতনের একটি সুচিন্তিত সমাজতাত্বিক ইতিহাস। ইহাতে স্বামীজী দেখাইয়াছেন যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র-শক্তি পর্যায়ক্রমে জগতে আধিপত্য বিস্তার করে। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের যুগ চলিয়া গিয়াছে, বৈশ্যশক্তি অধুনা জগতে আধিপত্য করিতেছে; কিন্তু এমন দিন শীঘ্রই আসিতেছে, যখন ‘শূদ্ৰত্বের সহিত শূদ্রের প্রাধান্য হইবে, অর্থাৎ বৈশ্যত্ব ক্ষত্রিয়ত্ব লাভ করিয়া শূদ্ৰজাতি যে প্রকার বলবীর্য বিকাশ করিতেছে, তাহা নহে। শূদ্রধর্মকর্মের সহিত সর্বদেশের শূদ্রের সমাজে একাধিপত্য লাভ করিবে, তাহারই পূর্বাভাসচ্ছটা পাশ্চাত্য জগতে ধীরে ধীরে উদিত হইতেছে...।” পঞ্চাশ বৎসরেরও অধিককাল পূর্বে স্বামীজী যে ভবিষ্যদ্বাণী করিয়া গিয়াছেন, বর্তমানে তাহারই সূচনা দেখা যাইতেছে।

ঐ পুস্তক-প্রণয়নকালে ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রবল ছিল। বিদেশী পাশ্চাত্য বৈশ্য-শাসনের গুণদোষ বিচার করিয়া স্বামীজী দেখাইয়াছেন যে, ইহার সংস্পর্শে আসিয়া দীর্ঘ সুপ্ত ভারত ধীরে ধীরে বিনিদ্র হইতেছে। আধুনিক পাশ্চাত্যের অর্থকরী বিদ্যা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতির আদর্শ ধীরে ধীরে ভারতীয় মনে প্রবেশ করিতেছে। ইহাতে কিছু বিপদের আশঙ্কাও দেখা দিয়াছে। আপন আদর্শ ভুলিয়া আমরা বিদেশের আদর্শকেই সর্বান্তঃকরণে গ্রহণ করিতে উদ্যত। তাই স্বামীজী তাহার দৃপ্ত ভাষায় আমাদিগকে সাবধান করিয়া দিয়াছেন।

স্বামীজীর রচিত সংস্কৃত স্তোত্র, বাংলা কবিতাগুলি এবং কয়েকটি ইংরেজী কবিতা অনেকদিন হইতে ‘বীরবাণী’ নামক ক্ষুদ্র পুস্তকে কলিকাতা বিবেকানন্দ সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত হইতেছে। সেই সংগ্রহ হইতে সংস্কৃত স্তোত্র ও বাংলা কবিতা গুলি বর্তমান খণ্ডে গৃহীত হইল; ইংরেজী কবিতার অনুবাদ পরবর্তী খণ্ডে প্রকাশিত হইতেছে। স্বামীজীর কবিতা তাহার অন্তরের গভীর ভাব প্রস্থত; এগুলি শুধু ছন্দোবদ্ধ পদ নহে।

স্বামীজীর অগ্নিগর্ভ ‘পত্রাবলী’ সমগ্র জগৎকে উদ্বুদ্ধ করিবার জন্যই লিখিত হইয়াছিল। অমােঘ শক্তি-সঞ্চারক পত্রগুলি—বিশেষভাবে আত্মবিস্মৃত ভারতের পক্ষে অশেষ কল্যাণপ্রদ ও যুগোপযোগী। পত্রাবলীতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের পরিচয় ৭ম খণ্ডের শেষে সন্নিবেশিত হইতেছে ; ৮ম খণ্ডের শেষে পত্রাবলীর তথ্যপঞ্জী ও সূচীপত্র সংঘােজিত হইবে।

স্বামীজীর এই সকল মৌলিক প্রবন্ধ, কবিতা এবং পত্রাবলী পাঠ করিয়া দেশবাসী নূতন করিয়া উদ্বুদ্ধ হউন, ইহাই আমাদের প্রার্থনা।

পরিশেষে যাহারা এই খণ্ডটি প্রকাশ করিবার জন্য আমাদিগকে অল্পবিস্তর সাহায্য করিয়াছেন, তাঁহাদের সকলকেই আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাইতেছি। পূর্ব পূর্ব খণ্ডের ন্যায় এই খণ্ডেরও দুই হাজার সেটের অধিকাংশ ব্যয় ভারত-সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার বহন করিয়া আমাদিগকে কৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ করিয়াছেন।


প্রকাশক 

স্বামী জ্ঞানাত্মানন্দ 

উদ্বোধন কার্যালয় 

কলিকাতা-৩


বেলুড় শ্রীরামকৃষ্ণ মঠের 

অধ্যক্ষ কর্তৃক 

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Post a Comment

0 Comments