শিক্ষা বিষয়ক স্বামীজির ২৬টি জ্বালাময়ী বানী

শিক্ষা

শিক্ষা বিষয়ক স্বামীজির ২৬টি জ্বালাময়ী বানী

শিক্ষা বিষয়ক স্বামীজির ২৬টি জ্বালাময়ী বানী


শিক্ষা হচ্ছে, মানুষের ভিতর যে পূর্ণতা প্রথম থেকেই বিদ্যমান, তারই প্রকাশ।

ধর্ম হচ্ছে মানুষের ভিতর যে ব্ৰহ্মত্ব প্রথম থেকেই বিদ্যমান, তারই প্রকাশ। ৬ |৪০০
******
ধর্মকে আমি শিক্ষার ভিতরকার সার জিনিস বলিয়াই মনে করি। ৯।৪৮২
******
কেবল শিক্ষা, শিক্ষা, শিক্ষা! ইওরােপের বহু নগরী পর্যটন করিয়া তাহাদের দরিদ্রেরও সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও বিদ্যা দেখিয়া আমাদের গরিবদের কথা মনে পড়িয়া (যাওয়ায়) অশ্রুবিসর্জন করিতাম। কেন এই পার্থক্য হইল? শিক্ষা—জবাব পাইলাম। শিক্ষাবলে আত্মপ্রত্যয়, আত্মপ্রত্যয়-বলে অন্তর্নিহিত ব্রহ্ম জাগিয়া উঠিতেছেন; আর আমাদের—ক্রমেই তিনি সঙ্কুচিত হইতেছেন। ৭।৩২৬
******
দেশে কি মানুষ আছে? ও শ্মশানপুরী। যদি Lower class-দের education (নিম্নশ্রেণীদের শিক্ষা) দিতে পার, তাহলে উপায় হতে পারে। জ্ঞানবলের চেয়ে বল আর কি আছে—বিদ্যা শেখাতে পার? ৭।১৯৬
******
চণ্ডালের বিদ্যাশিক্ষার যত আবশ্যক, ব্রাহ্মণের তত নহে। যদি ব্রাহ্মণের ছেলের একজন শিক্ষকের আবশ্যক, চণ্ডালের ছেলের দশজনের আবশ্যক। কারণ প্রকৃতি যাহাকে স্বভাবতঃ প্রখর করেন নাই, তাহাকে অধিক সাহায্য করিতে হইবে। তেলা মাথায় তেল দেওয়া পাগলের ধর্ম। ৭।৭৬
******
বিদ্যাশিক্ষা কাকে বলি? বই পড়া?-না, নানাবিধ জ্ঞানার্জন? তাও নয়। যে শিক্ষা দ্বারা এই ইচ্ছাশক্তির বেগ ও স্ফুর্তি নিজের আয়ত্তাধীন ও সফলকাম হয়, তাহাই শিক্ষা। এখন বােঝ, যে শিক্ষার ফলে এই ইচ্ছাশক্তি ক্রমাগত পুরুষানুক্রমে বলপূর্বক নিরুদ্ধ হইয়া এক্ষণে লুপ্তপ্রায় হইয়াছে, যাহার শাসনে নূতন ভাবের কথা দূরে থাক, পুরাতনগুলিই একে একে অন্তর্হিত হইতেছে, যাহা মানুষকে ধীরে ধীরে যন্ত্রের ন্যায় করিয়া ফেলিতেছে, সে কি শিক্ষা? ৮|১৬৯
******
মনকে রাশি রাশি তথ্য দিয়া ভরিয়ে রাখার নাম শিক্ষা নয়। মনরূপ যন্ত্রটিকে সুষ্ঠুভাবে করিয়া তােলা এবং উহাকে সম্পূর্ণ বশীভূত করা—ইহাই হইল শিক্ষার আদর্শ। ১০।১৪৩
******
আমাদের বালকদের যে বিদ্যাশিক্ষা হচ্ছে, তাও একান্ত নেতিভাবপূর্ণ—স্কুল-বালক কিছুই শেখে না, কেবল সব ভেঙে চুরে যায়—ফল শ্রদ্ধাহীনতা'। যে শ্রদ্ধা বেদবেদান্তের মূলমন্ত্র, যে শ্রদ্ধা নতিকেতাকে যমের মুখে যাইয়া প্রশ্ন করিতে সাহসী করিয়াছিলযে শ্রদ্ধাবলে এই , তাই আমরা বিনাশের এত নিকট। ...র লােপ।শ্ৰদ্ধা’ সে ,জগৎ চলিতেছে এক্ষণে উপায়শিক্ষার প্রচার। ৭ |৩২৭
******
মাথায় কতকগুলাে তথ্য ঢুকানাে হইল, সারাজীবন হজম হইল না—অসম্বদ্ধভাবে মাথায় ঘুরিতে লাগিল—ইহাকে শিক্ষা বলে না। বিভিন্ন ভাবকে এমনভাবে নিজের করিয়া লইতে হইবে, যাহাতে আমাদের জীবন গঠিত হয়। যদি তােমরা পাঁচটি ভাব হজম করিয়া জীবন একটি গ্রন্থাগারের সবগুলি পুস্তক মুখস্থ করিয়াছে, তাহা অপেক্ষা তােমার অধিক শিক্ষা হইয়াছে বলিতে হইবে। ৫|২০০
******
শিক্ষা মজ্জাগত হইয়া কৃষ্টিতে পরিণত হইলে ভাববিপ্লবের ধাক্কা সহ্য করিতে পারে, শুধু বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানরাশি তাহা পারে না। ৫|১৮৭
******
কোন জ্ঞানই বাহির হইতে আসে না, সবই ভিতরে।...আমরা বলি, নিউটন মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কার করিয়াছিলেন। উহা কি এককোণে বসিয়া তাঁহার নিজ মনেই অবস্থিত ছিল।...সময় আসিল, অমনি তিনি উহা দেখিতে পাইলেন। মানুষ যত প্রকার জ্ঞান লাভ করিয়াছে, সবই মন হইতে। জগতের অস্ত পুস্তকাগার তােমারই মনে। বহির্জগৎ কেবল তােমার নিজ মনকে অধ্যয়ন করিবার উত্তেজক কারণ—উপলক্ষমাত্র, তােমার নিজ মনই সর্বদা তােমার অধ্যনের বিষয়।..অগ্নি যেমন এক খণ্ড চকমকিতে নিহিত থাকে, জ্ঞান তেমনি মনের মধ্যেই রহিয়াছে; উদ্দীপক কারণটি যেন ঘর্ষণ, জ্ঞানাগ্নিকে প্রকাশ করিয়া দেয়। ১।৪৩
******
আমার মতে মনের একাগ্রতা-সাধনই শিক্ষার প্রাণ, শুধু তথ্য সংগ্রহ করা নহে। আবার যদি আমাকে নূতন করিয়া শিক্ষালাভ করিতে হইত এবং নিজের ইচ্ছামত আমি তাহা করিতে পারিতাম, তাহা হইলে আমি শিক্ষণীয় বিষয় লইয়া মােটেই মাথা ঘামাইতাম না। আমি আমার মনের একাগ্রতা ও নির্লিপ্ততার ক্ষমতাকেই ক্রমে ক্রমে বাড়াইয়া তুলিতাম; তার পরে ঐভাবে গঠিত নিখুত যন্ত্র-সহায়ে খুশিমত তথ্য সংগ্রহ করিতে পারিতাম। মনকে একাগ্র ও নির্লিপ্ত করিবার ক্ষমতাবর্ধনের শিক্ষা শিশুদের একসঙ্গেই দেওয়া উচিত। ৩।৪৩৫
******
যাতে চরিত্র তৈরি হয়, মনের শক্তি বাড়ে, বুদ্ধির বিকাশ হয়, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারে, এই রকম শিক্ষা চাই। ৯।৪২৬
******
সর্বপ্রকার শিক্ষার অর্থই আদান-প্রদান—আচার্য দিবেন, শিষ্য গ্রহণ করিবেন। কিন্তু আচার্যের কিছু দিবার বস্তু থাকা চাই, শিষ্যেরও গ্রহণ করিবার জন্য প্রস্তুত হওয়া চাই। ৮।৩৯৯
******
তিনিই প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারেন, যাঁহার কিছু দিবার আছে; কারণ শিক্ষা-প্রদান বলিতে কেবল কথা বলা বুঝায় না, উহা কেবল মতামত বুঝানাে নহে; শিক্ষা-প্রদান বলিতে বুঝায় ভাব-সঞ্চার। ৮।৩৯৮
******
শিক্ষকের কার্য কেবল পথ থেকে সব অন্তরায় সরিয়ে দেওয়া। আমি যেমন সর্বদা বলে থাকি; ‘অপরের অধিকারে হাত দিও না, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমাদের কর্তব্য, রাস্তা সাফ করে দেওয়া। ৬।৪০০
******
শিক্ষকদিগকে শিক্ষা দিতে হইলে তাহাদের প্রতি অগাধ বিশ্বাসসম্পন্ন হইতে হইবে, বিশ্বাস করিতে হইবে যে, প্রত্যেক শিশুই অনন্ত ঈশ্বরীয় শক্তির আধার স্বরূপ, আমাদিগকে তাহার মধ্যে অবস্থিত সেই নিদ্রিত ব্রহ্মকে জাগ্রত করিবার চেষ্টা করিতে হইবে। শিশুদিগকে শিক্ষা দিবার সময় আর একটি বিষয় আমাদিগকে স্মরণ রাখিতে হইবে—তাহারাও যাহাতে নিজেরা চিন্তা করিতে শেখে, এই বিষয়ে তাহাদিগকে উৎসাহ দিতে হইবে। এই মৌলিক চিন্তার অভাবেই ভারতের বর্তমান হীনাবস্থার কারণ। যদি এইভাবে ছেলেদের শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে তাহারা মানুষ হইবে এবং জীবনসংগ্রামে নিজেদের সমস্যা সমাধান করিতে সমর্থ হইবে। ৫|৩৪২
******
ছােট ছেলেদের ‘গাধা পিটে ঘােড়া করা’-গােছ শিক্ষা দেওয়াটা তুলে দিতে একেবারে।...কেউ কাকেও শেখাতে পারে না। শেখাচ্ছি মনে করেই শিক্ষক সব মাটি করে। কি জানিস, বেদান্ত বলেঃ এই মানুষের ভেতরেই সব আছে। একটা ছেলের ভেতরেও সব আছে। কেবল সেইগুলি জাগিয়ে দিতে হবে, এইমাত্র শিক্ষকের কাজ। ছেলেগুলাে যাতে নিজ নিজ হাত-পা নাক-কান-মুখ-চোখ ব্যবহার করে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে নিতে শেখে, এইটুকু করে দিতে হবে। তাহলেই আখেরে সবই সহজ হয়ে পড়বে।... মেলা কতকগুলাে কেতাবপত্র মুখস্থ করিয়ে মনিষ্যিগুলাের মুণ্ডু বিগড়ে দিচ্ছিল। উচ্চশিক্ষা তুলে দিচ্ছে বলে দেশটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে। বাপ! কি পাসের ধুম, আর দুদিন পরেই সব ঠাণ্ডা! শিখলে কি? না, নিজেদের সব মন্দ, সাহেবদের সব ভাল! শেষে অন্ন জোটে না! এমন উচ্চশিক্ষা থাকলেই কি, আর গেলেই বা কি? তার চেয়ে একটু কারিগরি শিক্ষা পেলে লােকগুলাে কিছু করে খেতে পারবে, চাকরি করে আর চেঁচাবে না। ৯।৪০১
******
জনসাধারণকে শিক্ষিত করা এবং তাহাদিগকে উন্নত করাই জাতীয় জীবন-গঠনের পন্থা। আমাদের সমাজ-সংস্কারকগণ খুঁজিয়া পান না—ক্ষতটি কোথায়।...সমস্ত ক্রটির মূলই এইখানে যে, সত্যিকার জাতি—যাহারা কুটিরে বাস করে, তাহারা তাহাদের ব্যক্তিত্ব ও মনুষ্যত্ব ভুলিয়া গিয়াছে।...তাহাদের লুপ্ত ব্যক্তিত্ববােধ আবার ফিরাইয়া দিতে হইবে। তাহাদিগকে শিক্ষিত করিতে হইবে।... প্রত্যেককেই তাহার নিজের মুক্তির পথ করিয়া লইতে হইবে। রাসায়নিক দ্রব্যের একত্র সমাবেশ করাই আমাদের কর্তব্য—দানাবাঁধার কার্য ঐশ্বরিক বিধানে স্বতই হইয়া যাইবে। আসুন, আমরা তাহাদের মাথায় ভাব প্রবেশ করাইয়া দিই—বাকিটুকু তাহারা নিজেরাই করিবে। ইহার অর্থ, জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার করিতে হইবে। ৬।৪৩৫
******
যে বিদ্যার উন্মেষে ইতর-সাধারণকে জীবন-সংগ্রামে সমর্থ করিতে পারা যায় না, যাতে মানুষের চরিত্রবল, পরার্থপরতা, সিংহ-সাহসিকতা এনে দেয় না, সে কি আবার শিক্ষা? যে শিক্ষায় জীবনে নিজের পায়ের উপরে দাঁড়াতে পারা যায়, সেই হচ্ছে শিক্ষা। ৯।১০৭

আমাদের চাই কি জানিস? স্বাধীনভাবে স্বদেশী বিদ্যার সঙ্গে ইংরেজী আর বিজ্ঞান পড়ানাে, চাই কারিগরি শিক্ষা, চাই—যাতে শিল্প (Industry) বাড়ে; লােকে চাকরি না করে দু-পয়সা করে খেতে পারে। ৯।৪০৩
******
শহরের সর্বাপেক্ষা দরিদ্রগণের যেখানে বাস, সেখানে একটি মৃত্তিকানির্মিত কুটির ও হল প্রস্তুত কর। গােটাকতক ম্যাজিক লণ্ঠন, কতকগুলি ম্যাপ, গ্লোব এবং কতকগুলি রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি যােগাড় কর। প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় সেখানে গরিব, অনুন্নত, এমন কি চণ্ডালকে পর্যন্ত জড়াে কর, তাহাদিগকে প্রথমে ধর্ম উপদেশ দাও, তারপর ঐ ম্যাজিক লণ্ঠন ও অন্যান্য দ্রব্যের সাহায্যে জ্যোতিষ, ভূগােল প্রভৃতি চলিত ভাষায় শিক্ষা দাও। ৬।৪৩১
******
দরিদ্রদিগকে শিক্ষাদানের প্রধান বাধাঃ ভারতে দারিদ্র্য এত অধিক যে, দরিদ্র বালকেরা বিদ্যালয়ে না গিয়া বরং মাঠে গিয়া পিতাকে তাহার কৃষিকার্যে সহায়তা করিবে, অথবা অন্য কোন রূপে জীবিকা-অর্জনের চেষ্টা করিবে; সুতরাং যেমন পর্বত মহম্মদের নিকট না যাওয়াতে মহম্মদই পর্বতের নিকট গিয়াছিলেন, সেইরূপ দরিদ্র বালক যদি শিক্ষালয়ে আসিতে না পারে, তবে তাহাদের নিকট শিক্ষা পৌঁছাইয়া দিতে হইবে। ৬।৪৪২
******
দরিদ্রের শিক্সা অধিকাংশই শ্রুতির দ্বারা হওয়া চাই, স্কুল ইত্যাদির এখনও সময় আসে নাই। ক্রমশঃ ঐ সকল প্রধান কেন্দ্রে কৃষি বাঞিজ্য প্রভৃতি শিখানাে যাবে এবং শিল্পাদিরও যাহাতে এদেশে উন্নতি হয়, তদুপায়ে কর্মশালা খােলা যাবে। ৭।৩২৮
******
চক্ষুই যে জ্ঞানলাভের একমাত্র দ্বার তাহা নহে, পরন্তু কর্ণ দ্বারাও শিক্ষার কার্য যথেষ্ট হইতে পারে। এইরূপ তাহারা নূতন চিন্তার সহিত পরিচিত হইতে পারে, নৈতিক শিক্ষালাভ করিতে পারে এবং ভবিষ্যতে অপেক্ষাকৃত ভাল হইবে বলিয়া আশা করিতে পারে। এইটুকু পর্যন্ত আমাদের কর্তব্য—বাকিটুকু উহারা নিজেরাই করিবে। ৬।৪৩৭
******
দুষ্ট প্রকার দান বিশেষ প্রশংসা; বিদ্যাদান আর প্রাণদান। বিদ্যাদানের স্থান সর্বাগ্রে। অপরের জীবন রক্ষা করা উত্তম কর্ম, বিদ্যাদান অধিকতর উত্তম কর্ম। অর্থের বিনিময়ে যিনি বিদ্যা বিক্রয় করেন, তিনি নিন্দাহ। ৫|৪১০
******

Post a Comment

0 Comments