২৮টি আত্মবিশ্বাসের বানী ~ স্বামী বিবেকানন্দ

আত্মবিশ্বাস

২৮টি আত্মবিশ্বাসের  বানী ~ স্বামী বিবেকানন্দ

আত্মবিশ্বাস - স্বামী বিবেকানন্দের বানী 


বিশ্বাস, বিশ্বাস, বিশ্বাস নিজের উপর বিশ্বাস—ঈশ্বরে বিশ্বাস—ইহাই উন্নতি লাভের একমাত্র উপায়। যদি তােমার পুরাণের তেত্রিশ কোটি দেবতার এবং বৈদেশিকেরা মধ্যে মধ্যে যেসকল দেবতার আমদানি করিয়াছে, তাহার সবগুলিতেই বিশ্বাস থাকে, অথচ যদি তােমার আত্মবিশ্বাস না থাকে, তবে তােমার কখনই মুক্তি হইবে না। ৫।৭৯
******
পৃথিবীর ইতিহাস কয়েকজন আত্মবিশ্বাসই মানুষেরই ইতিহাস। সেই বিশ্বাসই ভিতরের দেবত্ব জাগ্রত করে। তুমি সব কিছু করিতে পার। অনন্ত শক্তিকে বিকশিত করিতে যথােচিত যত্নবান হও না বলিয়াই বিফল হও। যখনই কোন ব্যক্তি বা জাতি আত্মবিশ্বাস হারায়, তখনই তাহার বিনাশ হয়। ১।১৭২
******
যে নিজেকে বিশ্বাস করে না, সে-ই নাস্তিক। প্রাচীন ধর্ম বলিতঃ যে ঈশ্বর বিশ্বাস করে না, সে নাস্তিক। নূতন ধর্ম বলিতেছেঃ যে নিজেকে বিশ্বাস করে না, সে-ই নাস্তিক। ২|২৩০
******
কখনও ভাবিও না, আত্মার পক্ষে কিছু অসম্ভব। এরূপ বলা ভয়ানক নাস্তিকতা। যদি পাপ বলিয়া কিছু থাকে, তবে 'আমি দুর্বল' বা 'ওরা দুর্বল'–এরূপ বলাই একমাত্র পাপ। ২।২৩৭
******
তুমি যাহা চিন্তা করিবে, তাহাই হইয়া যাইবে। যদি তুমি নিজেকে দুর্বল ভাব, তবে দুর্বল হইবে। তেজস্বী ভাবিলে তেজস্বী হইবে। ৫|২৭

বিফলতা, ভ্রম থাকিলেই বা; গরুকে কখনও মিথ্যা কথা বলিতে শুনি নাই, কিন্তু উহা চিরকাল গরুই থাকে, কখনই মানুষ হয় না। অতএব বার বার বিফল হও, কিছুমাত্র ক্ষতি নাই; সহস্রবার ঐ আদর্শ হৃদয়ে ধারণ কর, আর যদি সহস্রবার অকৃতকার্য হও, আর একবার চেষ্টা করিয়া দেখ। ২।১৭৬
******
মানুষকে সর্বদা তাহার দুর্বলতার বিষয় ভাবিতে বলা তাহার দুর্বলতার প্রতিকার নয়; তাহার শক্তির কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়াই প্রতিকারের উপায়। ২|২২৯
******
হে আমার যুবক বন্ধুগণ, তােমরা সবল হও—তােমাদের নিকট ইহাই আমার বক্তব্য। গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তােমার স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে। আমাকে অতি সাহসপূর্বক এই কথাগুলি বলিতে হইতেছে; কিন্তু না বলিলেই নয়। আমি তােমাদিগকে ভালবাসি। আমি জানি, পায়ে কোথায় কাঁটা বিধিতেছে। আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে। তােমাদের বলি, তােমাদের শরীর একটু শক্ত হইলে তােমরা গীতা আরও ভাল বুঝিবে। ৫|১৩৪
******
জীবনের পরম সত্য এইঃ শক্তিই জীবন, দুর্বলতাই মৃত্যু। শক্তিই সুখ ও আনন্দ, শক্তিই অনন্ত ও অবিনশ্বর জীবন; দুর্বলতাই অবিরাম দুঃখ ও উদ্বেগের কারণ; দুর্বলতাই মৃত্যু। ১।১৫৩
******
সাফল্য লাভ করিতে হইলে প্রবল অধ্যবসায়, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকা চাই। অধ্যবসায়শীল সাধক বলেন, 'আমি গতূষে সমুদ্র পান করিব। আনার ইচ্ছামাত্রে পর্বত চূর্ণ হইয়া যাইবে। এইরূপ তেজ, এইরূপ সঙ্কল্প আশ্রয় করিয়া খুব দৃঢ়ভাবে সাধন কর। নিশ্চয়ই লক্ষ্যে উপনীত হইবে। ১।২৭২
******
কেবল খাইয়া পরিয়া মূখের মতাে জীবন-যাপন অপেক্ষা মৃত্যুও শ্রেয়ঃ; পরাজয়ের জীবনযাপন অপেক্ষা যুদ্ধক্ষেত্রে মরা শ্রেয়ঃ। ২।৮৫
******
নিরাশ হইও না; পথ বড় কঠিন—যেন ক্ষুরধারের ন্যায় দুর্গম; তাহা হইলেও নিরাশ হইও ; উঠ—জাগাে এবং তােমাদের চরম আদর্শে উপনীত হও। ২।৮৬
******
যে যা বলে বলুক, আনার গাঁয়ে চলে যাওদুনিয়া তােমার পায়ের তলায় আসবে, ভাবনা নেই। বলে—একে বিশ্বাস কর, ওকে বিশ্বাস কর; বলি, প্রথমে আপনাকে বিশ্বাস কর দিকি।নিজের উপর বিশ্বাস রাখ, সমুদয় শক্তি তােমার ভিতরে—এইটি জান এবং ঐ শক্তি অভিব্যক্ত কর। ৬।৪৮৯
******
সাহস অবলম্বন কর। আমা দ্বারা ও তােমাদের দ্বারা বড় বড় কাজ হইবে, এই বিশ্বাস রাখ। ভগবান বড় বড় কাজ করিবার জন্য আমাদিগকে নির্দিষ্ট করিয়াছেন, আমরা তাহা করিব। ৬।১৮৪
******
যাহা যবনদিগের ছিল, যাহা অবলম্বনে ইওরােপীয় বিদ্যুদাধার ঘন ঘন মহাশক্তির সঞ্চার হইয়া ভূমণ্ডল পরিমণ্ডল পরিব্যাপ্ত করিতেছে, চাই তাহাই।...চাই সেই উদ্যম, সেই স্বাধীনতাপ্রিয়তা, সেই আত্মনির্ভর, সেই অটল ধৈর্য, সেই কার্যকারিতা, সেই একতা-বন্ধন, সেই উন্নতি-তৃষ্ণা; চাই—আপাদমস্তক শিরায় শিরায় সঞ্চারকারী রজোগুণ। ৬।৩২
******
নীতিপরায়ন ও সাহসী হও, যেন সম্পূর্ণ শুদ্ধ তাকে। সম্পূর্ণ নীতিপরায়ণ ও সাহসী হও— প্রাণের ভয় পর্যন্ত রাখিও না। ধর্মের মতামত লইয়া মাথা বকাইও না। কাপুরুষেরাই পাপ করিয়া থাকে, বীর কখনও পাপ করে না—মনে পর্যন্ত পাপচিন্তা আসিতে দেয় না। ৬।৩০২
******
সকলকে গিয়ে বল—'ওঠ, জাগাে, আর ঘুমিও না; সকল অভাব, সকল দুঃখ ঘুচাবার শক্তি তােমাদের নিজের ভিতর রয়েছে, এ কথা বিশ্বাস কর, তাহলেই ঐ শক্তি জেগে উঠবে। ৯।১৩
******
সিংহ-গর্জনে আত্মার মহিমা ঘােষণা কর, জীবকে অভয় দিয়ে বল—“উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবোেধত’—Arise! Awake! and stop not till the goal is reached (ওঠ, জাগাে, লক্ষ্যে না পৌঁছানাে পর্যন্ত থামিও না)। ৯।৯৮
******
বল, আমি যে কষ্ট ভােগ করিতেছি, তাহা আমারই কৃতকর্মের ফল। ইহা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমা-দ্বারাই এই দুঃককষ্ট দূরীভূত হইবে। যাহা আমি সৃষ্টি করিয়াছি, তাহা আমিই ধ্বংস করিতে পারি।...অতএব ওঠ, সাহসী হও, বীর্যবান হও। সব দায়িত্ব নিজের উপর গ্রহণ কর—জানিয়া রাখ, তুমিই তােমার অদৃষ্টের সৃষ্টিকর্তা। তুমি যে শক্তি বা সহায়তা চাও, তাহা তােমার ভিতরেই রহিয়াছে। ২।১৩৫
******
পরােপকারই ধর্ম, পরপীড়নই পাপ। শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম, দুর্বলতা ও কাপুরুষতাই পাপ। স্বাধীনতাই ধর্ম, পরাধীনতাই পাপ। ঈশ্বরে ও নিজ আত্মাতে বিশ্বাসই ধর্ম, সন্দেহই পাপ। অভেদ-দর্শনই ধর্ম, ভেদ-দর্শনই পাপ। ১০|২৮১
******
শরীরে বল নেই, হৃদয়ে উৎসাহ নেই, মস্তিষ্কে প্রতিভা নেই। কি হবে রে, জড় পিণ্ডগুলাে দিয়ে? আমি নাড়ে চেড়ে এদের ভেতর সাড় আনতে চাই—এগুলাে আমার প্রাণান্ত পণ। বেদান্তের অমােঘ মন্ত্র-বলে এদের জাগাব। উত্তিষ্ঠত জাগ্রত’–এই অভয়বাণী শােনাতেই আমার জন্ম। তােরা ঐ কাজে আমার সহায় হ। ৯।১৬৪
******
আত্মবিশ্বাসরূপ আদর্শই মানব-জাতির সর্বাধিক কল্যাণ সাধন করিতে পারে। যদি এই আত্মবিশ্বাস আরও বিস্তারিতভাবে প্রচারিত ও কার্যে পরিণত করা হইত, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জগতে যত দুঃখ-কষ্ট রহিয়াছে, সেগুলির বেশির ভাগ দূরীভূত হইত। সমগ্র মানব জাতির ইতিহাসে মহাপ্রাণ নরনারীর মধ্যে যদি কোন প্রেরণা অধিকতর শক্তি সঞ্চার করিয়া থাকে, তাহা আত্মবিশ্বাস। ২|২২৯
******
আগে নিজের পায়ের উপর দাঁড়াও, তারপর সকল জাতির নিকট হইতে শিক্ষা গ্রহণ কর, যাহা কিছু পার আপনার করিয়া লও; যাহা কিছু আপনার কাজে লাগিবে, তাহা গ্রহণ কর। তবে একটি কথা মনে রাখিও—তােমরা যখন হিন্দু (ভারতবাসী), তখন তােমরা যাহা কিছু শিক্ষা কর না কেন, তাহাই যেন তােমাদের জাতীয় জীবনের মূলমন্ত্রস্বরূপ ধর্মের নিম্নে স্থান গ্রহন করে। ৫|৪৪
******
শত শত শতাব্দী যাবৎ মানুষকে তাহার হীনত্বজ্ঞাপক মতবাদসমূহ শেখানাে হইয়াছে— তাহারা কিছুই নহে। সর্বত্র জনসাধারণকে চিরকাল বলা হইয়াছে—তােমরা মানুষ নও। শত শত শতাব্দী যাবৎ তাহাদিগকে এইরূপে ভয় দেখানাে হইয়াছে—ক্রমশঃ তাহারা সত্য-সত্যই পশুস্তরে নামিয়া গিয়াছে।...তাহারা জানুক যে, তাহাদের মধ্যে নিম্নতম ব্যক্তির হৃদয়েও আত্মা রহিয়াছেন..তিনি অবিনাশী অনাদি অনন্ত শুদ্ধস্বরূপ সর্বশক্তিমান ও সর্বব্যাপী।

তাহারা আত্মবিশ্বাসী হউক। ইংরেজ জাতির সঙ্গে তােমাদের এত প্রভেদ কিসে?...প্রভেদ এই, ইংরেজ নিজের উপর বিশ্বাসী, তােমরা বিশ্বাসী নও। ইংরেজ বিশ্বাস করে—সে যখন ইংরেজ, তখন সে যাহা ইচ্ছা তাহাই করিতে পারে।...তােমাদিগকে লােকে বলিয়া আসিতেছে ও শিক্ষা দিতেছে যে, তােমাদের কিছু করিবার ক্ষমতা নাই—কাজেই তােমরা অকর্মণ্য হইয়া পড়িয়াছ। অতএব আত্মবিশ্বাসী হও। ৫।১১৪
******
বিশ্বাস, বিশ্বাস, সহানুভূতি, অগ্নিময় বিশ্বাস, অগ্নিময় সহানুভূতি... তুচ্ছজীবন, তুচ্ছ ক্ষুধা, তুচ্ছ শীত। ...অগ্রসর হও। ...পশ্চাতে চাহিও না। কে পড়িল দেখিতে যাইও না। এগিয়ে যাও—সম্মুখে। এইরূপেই আমরা অগ্রগামী হইব—একজন পড়িবে, আর একজন তাহার স্থান অধিকার করিবে। ৬।৩৬৭
******
হীন কাপুরুষের মতাে অনুকরণ কখনই উন্নতির কারণ হয় না, বরং উহা মানুষের ঘাের অধঃপতনের চিহ্ন। যখন মানুষ নিজেকে ঘৃণা করিতে আরম্ভ করে, তখন বুঝিতে হইবে— তাহার উপর শেষ আঘাত পড়িয়াছে।... অতএব তােমরা আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন হও, তােমাদের পূর্বপুরুষগণের নামে লজ্জিত না হইয়া তাহাদের নামে গৌরব অনুভব কর; আর অনুকরণ করিও না। যখনই তােমরা আপরের ভাবানুসারে পরিচালিত হইবে, তখনই তােমরা নিজেদের স্বাধীনতা হারাইবে। এমনকি, আধ্যাত্মিক বিষয়েও যদি তােমরা আজীবন কার্য কর তােমরা সকল শক্তি, এমনকি চিন্তাশক্তি পর্যন্ত হারাইয়া ফেলিবে।

তােমাদের ভিতর যাহা আছে, নিজ শক্তিবলে তাহা প্রকাশ কর, কিন্তু অনুকরণ করিও না; অথচ অপরের যাহা ভাল, তাহা গ্রহণ কর। আমাদিগকে অপরের নিকট শিখিতে হইবে। অবশ্য অপরের নিকট হইতে আমাদের অনেক কিছু শিখিবার আছে; যে শিখিতে চায় না, সে তাে পূর্বেই মরিয়াছে।… অপরেঢ় নিকট ভাল যাহা কিছু পাও শিক্ষা কর, কিন্তু সেইটি লইয়া নিজেদের ভাবে গঠন করিয়া লইতে হইবে। ৫|২৮৩
******
দুইটি জিনিস হইতে বিশেষ সাবধান থাকিবে-ক্ষমতা-প্রিয়তা ও ঈর্ষা। সর্বদা আত্মবিশ্বাস অভ্যাস করিতে চেষ্টা কর। ৬।৫০৬
******
দৃঢ়ভাবে কার্য করিয়া যাও, অবিচলিত অধ্যবসায়শীল হও এবং প্রভুর উপর বিশ্বাস রাখ। কাজে লাগ। ...আমাদের কার্যের এই মূল কথাটি সর্বদা মনে রাখিবে—ধর্মে একবিন্দুও আঘাত না করিয়া জনসাধারণের উন্নতিবিধান। মনে রাখিবে, দরিদ্রের কুটিরেই আমাদের জাতীয় জীবন স্পন্দিত হইতেছে। কিন্তু হায়, কেহই ইহাদের জন্য কিছুই করে নাই।...তাহাদের স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক প্রকৃতি নষ্ট না করিয়া তাহাদিগকে আপনার পায়ে দাঁড়াইতে শিখাইতে পার? তােমরা কি সাম্য, স্বাধীনতা, কার্য ও উৎসাহে ঘাের পাশ্চাত্য এবং ধর্ম বিশ্বাস ও সাধনায় ঘাের হিন্দু (ভারতীয়) হইতে পার? ইহাই করিতে হইবে।...আমরাই ইহা করিব। তােমরা সকলে ইহা করিবার জন্যই আসিয়াছ। আপনাতে বিশ্বাস রাখাে। ৬।৩৯২
******

Post a Comment

0 Comments