একবিংশ খণ্ড
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মারোয়াড়ী ভক্ত মন্দিরে ভক্তসঙ্গে
প্রথম পরিচ্ছেদ
আন্দাজ বেলা ৩টার সময় মাস্টার ছোট গোপালের সঙ্গে বড়বাজারে আসিয়া উপস্থিত। ঠাকুর তেলধুতি কিনিতে আজ্ঞা করিয়াছিলেন, — সেইগুলি কিনিয়াছেন। কাগজে মোড়া; একহাতে আছে। মল্লিক স্ট্রীটে দুইজনে পৌঁছিয়া দেখেন, লোকে লোকারণ্য — গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি জমা হইয়া রহিয়াছে। ১২ নম্বরের নিকটবর্তী হইয়া দেখিলেন, ঠাকুর গাড়িতে বসিয়া, গাড়ি আসিতে পারিতেছে না। ভিতরে বাবুরাম, রাম চাটুজ্যে। গোপাল ও মাস্টারকে দেখিয়া ঠাকুর হাসিতেছেন।
ঠাকুর গাড়ি থেকে নামিলেন। সঙ্গে বাবুরাম, আগে আগে মাস্টার পথ দেখাইয়া লইয়া যাইতেছেন। মারোয়াড়ীদের বাড়িতে পৌঁছিয়া দেখেন, নিচে কেবল কাপড়ের গাঁট উঠানে পড়িয়া আছে। মাঝে মাঝে গরুর গাড়িতে মাল বোঝাই হইতেছে। ঠাকুর ভক্তদের সঙ্গে উপর তলায় উঠিলেন। মারোয়াড়ীরাও আসিয়া তাঁহাকে একটি তেতলার ঘরে বসাইল। সে ঘরে মা-কালীর পট রহিয়াছে — ঠাকুর দেখিয়া নমস্কার করিলেন, ঠাকুর আসন গ্রহণ করিলেন ও সহাস্যে ভক্তদের সঙ্গে কথা কহিতেছেন।
একজন মারোয়াড়ী আসিয়া ঠাকুরের পদসেবা করিতে লাগিলেন। ঠাকুর বলিলেন, থাক্ থাক্। আবার কি ভাবিয়া বলিলেন, আচ্ছা, একটু কর। প্রত্যেক কথাটি করুণামাখা।
মাস্টারকে বলিলেন, স্কুলের কি —
মাস্টার — আজ্ঞা, ছুটি।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — কাল আবার অধরের ওখানে চণ্ডীর গান।
মারোয়াড়ী ভক্ত গৃহস্বামী, পণ্ডিতজীকে ঠাকুরের কাছে পাঠাইয়া দিলেন। পণ্ডিতজী আসিয়া ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া আসন গ্রহণ করিলেন। পণ্ডিতজীর সহিত অনেক ঈশ্বরীয় কথা হইতেছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ — ভক্তের জন্য অবতার, জ্ঞানীর জন্য নয়।
পণ্ডিতজী — পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।
“অবতার, প্রথম, ভক্তের আনন্দের জন্য হন; আর দ্বিতীয়, দুষ্টের দমনের জন্য। জ্ঞানী কিন্তু কামনাশূন্য।”
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — আমার কিন্তু সব কামনা যায় নাই। আমার ভক্তিকামনা আছে।
এই সময়ে পণ্ডিতজীর পুত্র আসিয়া ঠাকুরের পাদবন্দনা করিয়া আসন গ্রহণ করিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (পণ্ডিতজীর প্রতি) — আচ্ছা জী! ভাব কাকে বলে, আর ভক্তি কাকে বলে?
পণ্ডিতজী — ঈশ্বরকে চিন্তা করে মনোবৃত্তি কোমল হয়ে যায়, তার নাম ভাব, যেমন সূর্য উঠলে বরফ গলে যায়।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আচ্ছা জী! প্রেম কাকে বলে?
পণ্ডিতজী হিন্দীতে বরাবর কথা কহিতেছেন। ঠাকুরও তাঁহার সহিত অতি মধুর হিন্দিতে কথা কহিতেচেন। পণ্ডিতজী ঠাকুরের প্রশ্নের উত্তরে প্রেমের অর্থ একরকম বুঝাইয়া দিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (পণ্ডিতজীর প্রতি) — না, প্রেম মানে তা নয়। প্রেম মানে ঈশ্বরেতে এমন ভালবাসা যে জগৎ তো ভুল হয়ে যাবে। চৈতন্যদেবের হয়েছিল।
পণ্ডিতজী — আজ্ঞে হ্যাঁ, যেমন মাতাল হলে হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আচ্ছা জী, কারু ভক্তি হয় কারু হয় না, এর মানে কি?
পণ্ডিতজী — ঈশ্বরের বৈষম্য নাই। তিনি কলপতরু, যে যা চায় সে তা পায়। তবে কল্পতরুর কাছে গিয়ে চাইতে হয়।
পণ্ডিতজী হিন্দীতে এ-সমস্ত বলিতেছেন। ঠাকুর মাস্টারের দিকে ফিরিয়া এই কথাগুলির অর্থ বলিয়া দিতেছেন।
পণ্ডিতজী — সমাধি দুইপ্রকার — সবিকল্প আর নির্বিকল্প। নির্বিকল্প-সমাধিতে আর বিকল্প নাই।
শ্রীরামকৃষ্ণ — হাঁ, ‘তদাকারকারিত’ ধ্যাতা, ধ্যেয় ভেদ থাকে না। আর চেতনসমাধি ও জড়সমাধি। নারদ শুকদেব এঁদের চেতনসমাধি। কেমন জী?
পন্ডিতজী — আজ্ঞা, হাঁ!
শ্রীরামকৃষ্ণ — আর জী, উন্মনাসমাধি আর স্থিতসমাধি; কেমন জী?
পণ্ডিতজী চুপ করিয়া রহিলেন; কোন কথা কহিলেন না।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আচ্ছা জী, জপতপ করলে তো সিদ্ধাই হতে পারে — যেমন গঙ্গার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া?
পণ্ডিতজী — আজ্ঞে তা হয়, ভক্ত কিন্তু তা চায় না।
আর কিছু কথাবার্তার পর পণ্ডিতজী বলিলেন, একাদশীর দিন দক্ষিণেশ্বরে আপনাকে দর্শন করতে যাব।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আহা, তোমার ছেলেটি বেশ।
পণ্ডিতজী — আর মহারাজ! নদীর এক ঢেউ যাচ্ছে, আর-এক ঢেউ আসছে। সবই অনিত্য।
শ্রীরামকৃষ্ণ — তোমার ভিতরে সার আছে।
পণ্ডিতজী কিয়ৎক্ষণ পরে প্রণাম করিলেন, বলিলেন, পূজা করতে তাহলে যাই।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আরে, বৈঠো, বৈঠো!
পন্ডিতজী আবার বসিলেন।
ঠাকুর হঠযোগের কথা পাড়িলেন। পণ্ডিতজী হিন্দিতে ঠাকুরের সহিত ওই সম্বন্ধে আলাপ করিতেছেন। ঠাকুর বলিলেন, হাঁ, ও-একরকম তপস্যা বটে, কিন্তু হঠযোগী দেহাভিমানী সাধু — কেবল দেহের দিকে মন।
পণ্ডিতজী আবার বিদায় গ্রহণ করিলেন। পূজা করিতে যাইবেন।
ঠাকুর পণ্ডিতজীর পুত্রের সহিত কথা কহিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — কিছু ন্যায়, বেদান্ত, আর দর্শন পড়লে শ্রীমদ্ভাগবত বেশ বোঝা যায়। কেমন?
পুত্র — হাঁ, মহারাজ! সাংখ্য দর্শন পড়া বড় দরকার।
এইরূপ কথা মাঝে মাঝে চলিতে লাগিল।
ঠাকুর তাকিয়ায় একটু হেলান দিয়া শুইলেন। পণ্ডিতজীর পুত্র ও ভক্ত কয়টি মেঝেতে উপবিষ্ট। ঠাকুর শুইয়া শুইয়া গান ধরিলেন —
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
মাস্টার — আজ্ঞে, পাণিনি?
শ্রীরামকৃষ্ণ — হ্যাঁ, আর ন্যায়, বেদান্ত এ-সব পড়া হয়?
গৃহস্বামী ও-সব কথায় সায় না দিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছেন।
গৃহস্বামী — মহারাজ, উপায় কি?
শ্রীরামকৃষ্ণ — তাঁর নামগুণকীর্তন। সাধুসঙ্গ। তাঁকে ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা।
গৃহস্বামী — আজ্ঞে, এই আশীর্বাদ করুন, যাতে সংসারে মন কমে যায়।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — কত আছে? আট আনা? (হাস্য)
গৃহস্বামী — আজ্ঞে, তা আপনি জানেন। মহাত্মার দয়া না হলে কিছু হবে না।
শ্রীরামকৃষ্ণ — সেইখানে সন্তোষ করলে সকলেই সন্তুষ্ট হবে। মহাত্মার হৃদয়ে তিনিই আছেন তো।
গৃহস্বামী — তাঁকে পেলে তো কথাই থাকে না। তাঁকে যদি কেউ পায়, তবে সব ছাড়ে। টাকা পেলে পয়সার আনন্দ চেড়ে যায়।
শ্রীরামকৃষ্ণ — কিছু সাধন দরকার করে। সাধন করতে করতে ক্রমে আনন্দ লাভ হয়। মাটির অনেক নিচে যদি কলসী করা ধন থাকে, আর যদি কেউ সেই ধন চায়, তাহলে পরিশ্রম করে খুঁড়ে যেতে হয়। মাথা দিয়ে ঘাম পড়ে, কিন্তু অনেক খোঁড়ার পর কলসীর গায়ে যখন কোদাল লেগে ঠং করে উঠে, তখনই আনন্দ হয়। যত ঠং ঠং করবে ততই আনন্দ। রামকে ডেকে যাও; তাঁর চিন্তা কর। রামই সব যোগাড় করে দেবেন।
গৃহস্বামী — মহারাজ, আপনিই রাম।
শ্রীরামকৃষ্ণ — সে কি, নদীরই হিল্লোল, হিল্লোলের কি নদী?
গৃহস্বামী — মহাত্মাদের ভিতরেই রাম আছেন। রামকে তো দেখা যায় না। আর এখন অবতার নাই।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — কেমন করে জানলে, অবতার নাই?
গৃহস্বামী চুপ করিয়া রহিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — অবতারকে সকলে চিনতে পারে না। নারদ যখন রামচন্দ্রকে দর্শন করতে গেলেন, রাম দাঁড়িয়া উঠে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম কল্লেন আর বললেন, আমরা সংসারী জীব; আপনাদের মতো সাধুরা না এলে কি করে পবিত্র হব? আবার যখন সত্যপালনের জন্য বনে গেলেন, তখন দেখলেন, রামের বনবাস শুনে অবধি ঋষিরা আহার ত্যাগ করে আনেকে পড়ে আছেন। রাম যে সাক্ষাৎ পরব্রহ্ম, তা তাঁরা অনেকে জানেন নাই।
গৃহস্বামী — আপনিই সেই রাম!
শ্রীরামকৃষ্ণ — রাম! রাম! ও-কথা বলতে নাই।
এই বলিয়া ঠাকুর হাতজোড় করিয়া প্রণাম করিলেন ও বলিলেন — “ওহি রাম ঘটঘটমে লেটা, ওহি রাম জগৎ পসেরা! আমি তোমাদের দাস। সেই রামই এই সব মানুষ, জীব, জন্তু হয়েছেন।”
গৃহস্বামী — মহারাজ, আমরা তো তা জানি না —
শ্রীরামকৃষ্ণ — তুমি জান আর না জান, তুমি রাম!
গৃহস্বামী — আপনার রাগদ্বেষ নাই।
শ্রীরামকৃষ্ণ — কেন? যে গাড়োয়ানের কলকাতায় আসবার কথা ছিল। সে তিনআনা পয়সা নিয়ে গেল, আর এলো না, তার উপরে তো খুব চটে গিছলুম!
কিন্তু ভারী খারাপ লোক, দেখ না, কত কষ্ট দিলে।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
বিগ্রহদর্শন করিয়া ঠাকুর ভাবে মুগ্ধ। হাতজোড় করিয়া বলিতেছেন, “প্রাণ হে, গোবিন্দ মম জীবন! জয় গোবিন্দ, গোবিন্দ, বাসুদেব সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ! হা কৃষ্ণ, হে কৃষ্ণ, জ্ঞান কৃষ্ণ, মন কৃষ্ণ, প্রাণ কৃষ্ণ, আত্মা কৃষ্ণ, দেহ কৃষ্ণ, জাত কৃষ্ণ, কুল কৃষ্ণ, প্রাণ হে গোবিন্দ মম জীবন!”
এই কথাগুলি বলিতে বলিতে ঠাকুর দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া সমাধিস্থ হইলেন। শ্রীযুক্ত রাম চাটুজ্যে ঠাকুরকে ধরিয়া রহিলেন।
অনেকক্ষণ পরে সমাধিভঙ্গ হইল।
এদিকে মারোয়াড়ী ভক্তেরা সিংহাসনস্থ ময়ূরমুকুটধারী বিগ্রহকে বাহিরে লইয়া যাইতে আসিলেন। বাহিরে ভোগ আয়োজন হইয়াছে।
শ্রীরামকৃষ্ণের সমাধিভঙ্গ হইয়াছে। মহানন্দে মারোয়াড়ী ভক্তেরা সিংহাসনস্থ বিগ্রহকে ঘরের বাহিরে লইয়া যাইতেছেন, ঠাকুরও সঙ্গে সঙ্গে যাইতেছেন।
ভোগ হইল। ভোগের সময় মারোয়াড়ী ভক্তেরা কাপড়ের আড়াল করিলেন। ভোগান্তে আরতি ও গান হইতে লাগিল। শ্রীরামকৃষ্ণ বিগ্রহকে চামর ব্যজন করিতেছেন।
এইবার ব্রাহ্মণ ভোজন হইতেছে। ওই ছাদের উপরেই ঠাকুরের সম্মুখে এই সকল কার্য নিষ্পন্ন হইতে লাগিল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে মারোয়াড়ীরা খাইতে অনুরোধ করিলেন। ঠাকুর বসিলেন, ভক্তেরাও প্রসাদ পাইলেন।
গাড়ি ঘুরিয়া কাছে আসিল। ঠাকুর আবার গাড়িতে উঠিলেন। ভিতরে ঠাকুরের সঙ্গে বাবুরাম, মাস্টার, রাম চাটুজ্যে। ছোট গোপাল গাড়ির ছাদে বসিলেন।
একজন ভিখারিণী, ছেলে কোলে গাড়ির সম্মুখে আসিয়া ভিক্ষা চাহিল। ঠাকুর দেখিয়া মাস্টারকে বলিলেন, কিগো পয়সা আছে? গোপাল পয়সা দিলেন।
বড়াবজার দিয়া গাড়ি চলিতেছে। দেওয়ালির ভারী ধুম। অন্ধকার রাত্রি কিন্তু আলোয় আলোকময়। বড়বাজারের গলি হইতে চিৎপুর রোডে পড়িল। সে স্থানেও আলোবৃষ্টি ও পিপীলিকার নামে লোকে লোকাকীর্ণ। লোক হাঁ করিয়া দুই পার্শ্বের সুসজ্জিত বিপণীশ্রেণী দর্শন করিতেছিল। কোথাও বা মিষ্টান্নের দোকান, পাত্রস্থিত নানাবিধ মিষ্টান্নে সুশোভিত। কোথাও বা আতর গোলাপের দোকান, নানাবিধ সুন্দর চিত্রে সুশোভিত। দোকানদারগণ মনোহর বেশ ধারণ করিয়া গোলাপপাশ হস্তে করিয়া দর্শকবৃন্দের গায়ে গোলাপজল বর্ষণ করিতেছিল। গাড়ি একটি আতরওয়ালার দোকানের সামনে আসিয়া পড়িল। ঠাকুর পঞ্চমবর্ষীয় বালকের ন্যায় ছবি ও রোশনাই দেখিয়া আহ্লাদ প্রকাশ করিতেছেন। চতুর্দিকে কোলাহল। ঠাকুর উচ্চৈঃস্বরে কহিতেছেন — আরও এগিয়ে দেখ, আরও এগিয়ে! ও বলিতে বলিতে হাসিতেছেন। বাবুরামকে উচ্চহাস্য করিয়া বলিতেছেন, ওরে এগিয়ে পড় না, কি করছিস?
মাস্টার — আজ্ঞা, একখানা ফিরিয়ে নিয়ে যাব?
শ্রীরামকৃষ্ণ — না হয় এখন থাক, দুইখানাই নিয়ে যাও।
মাস্টার — যে আজ্ঞা।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আবার যখন দরকার হবে, তখন এনে দেবে। দেখ না, কাল বেণী পাল রামলালের জন্য গাড়িতে খাবার দিতে এসেছিল। আমি বললুম, আমার সঙ্গে জিনিস দিও না। সঞ্চয় করবার জো নাই।
মাস্টার — আজ্ঞা হাঁ, তার আর কি। এ সাদা দুখানা এখন ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সস্নেহে) — আমার মনে একটা কিছু হওয়া তোমাদের ভাল না। — এ তো আপনার কথা, যখন দরকার হবে, বলব।
মাস্টার (বিনীতভাবে) — যে আজ্ঞা।
গাড়ি একটি দোকানের সামনে আসিয়া পড়িল, সেখানে কলকে বিক্রী হইতেছে। শ্রীরামকৃষ্ণ রাম চাটুজ্যেকে বলিলেন, রাম, একপয়সার কলকে কিনে লও না!
ঠাকুর একটি ভক্তের কথা কহিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — আমি তাকে বললুম কাল বড়বাজারে যাব, তুই যাস। তা বলে কি জান? “আবার ট্রামের চার পয়সা ভাড়া[1] লাগবে; কে যায়।” বেণী পালের বাগানে কাল গিছল, সেখানে আবার আচার্যগিরি কল্লে। কেউ বলে নাই, আপনিই গায় — যেন লোকে জানুক, আমি ব্রহ্মজ্ঞানীদেরই একজন। (মাস্টারের প্রতি) — হ্যাঁগা, এ কি বল দেখি, বলে, একানা আবার খরচ লাগবে!
মারোয়াড়ী ভক্তদের অন্নকূটের কথা আবার পড়িল।
শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) — এ যা দেখলে, বৃন্দাবনেও তাই। রাখালরা[2] বৃন্দাবনে এই সব দেখছে। তবে সেখানে অন্নকূট আরও উঁচু; লোকজনও অনেক, গোবর্ধন পর্বত আছে — এই সব প্রভেদ।
“হিন্দুধর্মই সনাতন ধর্ম! ইদানীং যে সকল ধর্ম দেখছ এ-সব তাঁর ইচ্ছাতে হবে যাবে — থাকবে না। তাই আমি বলি, ইদানীং যে সকল ভক্ত, তাদেরও চরণেভ্যো নমঃ। নিন্দুধর্ম বরাবর আছে আর বরাবর থাকবে।”
মাস্টার বাড়ি প্রত্যাগমন করিবেন। ঠাকুরের চরণ বন্দনা করিয়া শোভাবাজারের কাছে নামিলেন। ঠাকুর আনন্দ করিতে করিতে গাড়িতে যাইতেছেন।
————————–
১ তখন ট্রামের ভাড়া এক আনা।
২ শ্রীযুক্ত রাখাল তখনও (অক্টোবরে) বৃন্দাবনে ছিলেন।
0 Comments