বিংশ খণ্ড~শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত~দ্বিতীয় ভাগ

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-শ্রীম কথিত
দ্বিতীয় ভাগ 

বিংশ খণ্ড
দক্ষিণেশ্বরে কালীপূজা মহানিশায় ভজনানন্দে- সমাধিস্থ শ্রীরামকৃষ্ণ

বিংশ খণ্ড দক্ষিণেশ্বরে কালীপূজা মহানিশায় ভজনানন্দে- সমাধিস্থ শ্রীরামকৃষ্ণ

==========

প্রথম পরিচ্ছেদ

শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে কালীপূজা মহানিশায় ভক্তসঙ্গে

[মাস্টার, বাবুরাম, গোপাল, হরিপদ, নিরঞ্জনের আত্মীয়, রামলাল, হাজরা ]
আজ ৺কালীপূজা, ১৮ই অক্টোবর, ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দ, শনিবার (৩রা কার্তিক, অমাবস্যা)। রাত দশটা-এগারটার সময় ৺কালীপূজা আরম্ভ হইবে। কয়েকজন ভক্ত এই গভীর অমাবস্যা নিশিতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করিবেন, তাই ত্বরা করিয়া আসিতেছেন।
মাস্টার রাত্রি আন্দাজ আটটার সময় একাকী আসিয়া পৌঁছিলেন। বাগানে আসিয়া দেখিলেন, কালীমন্দিরে মহোৎসব আরম্ভ হইয়াছে। উদ্যানমধ্যে মাঝে মাঝে দীপ — দেবমন্দির আলোকে সুশোভিত হইয়াছে। মাঝে মাঝে রোশনচৌকি বাজিতেছে, কর্মচারীরা দ্রুতপদে মন্দিরের এ-স্থান হইতে ও-স্থানে যাতায়াত করিতেছেন। আজ রাসমণির কালীবাড়িতে ঘটা হইবে, দক্ষিণেশ্বরের গ্রামবাসীরা শুনিয়াছেন, আবার শেষরাত্রে যাত্রা হইবে। গ্রাম হইতে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা বহুসংখ্যক লোক ঠাকুরদর্শন করিতে সর্বদা আসিতেছে।
বৈকালে চণ্ডীর গান হইতেছিল — রাজনারায়ণের চণ্ডীর গান। ঠাকুর ভক্তসঙ্গে প্রেমানন্দে গান শুনিয়াছেন। আজ আবার জগতের মার পূজা হইবে। ঠাকুর আনন্দে বিভোর হইয়াছেন।
রাত্রি আটটার সময় পৌঁছিয়া মাস্টার দেখিতেছেন, ঠাকুর ছোট খাটটিতে বসিয়া আছেন, তাঁহাকে সম্মুখে করিয়া মেঝের উপর কয়েকটি ভক্ত বসিয়া আছেন — বাবুরাম, ছোট গোপাল, হরিপদ, কিশোরী, নিরঞ্জনের একটি আত্মীয় ছোকরা ও এঁড়েদার আর একটি ছেলে। রামলাল ও হাজরা মাঝে মাঝে আসিতেছেন ও যাইতেছেন।
নিরঞ্জনের আত্মীয় ছোকরাটি ঠাকুরের সম্মুখে ধ্যান করিতেছেন, — ঠাকুর তাঁহাকে ধ্যান করিতে বলিয়াছেন —
মাস্টার প্রণাম করিয়া উপবিষ্ট হইলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে নিরঞ্জনের আত্মীয় প্রণাম করিয়া বিদায় গ্রহণ করিলেন। এঁড়েদার দ্বিতীয় ছেলেটিও প্রণাম করিয়া দাঁড়াইলেন — ওই সঙ্গে যাবেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (নিরঞ্জনের আত্মীয়ের প্রতি) — তুমি কবে আসবে?
ভক্ত — আজ্ঞা, সোমবার — বোধ হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ (আগ্রহের সহিত) — লণ্ঠন চাই, সঙ্গে নিয়ে যাবে?
ভক্ত — আজ্ঞা না, এই বাগানের পাশে; — আর দরকার নাই।
শ্রীরামকৃষ্ণ (এঁড়েদার ছোকরাটির প্রতি) — তুইও চললি?
ছোকরা — আজ্ঞা, সর্দি —
শ্রীরামকৃষ্ণ — আচ্ছা, বরং মাথায় কাপড় দিয়ে যেও।
ছেলে দুটি আবার প্রণাম করিয়া চলিয়া গেলেন।

============

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

দক্ষিণেশ্বরে ৺কালীপূজা মহানিশায় শ্রীরামকৃষ্ণ ভজনানন্দে

গভীর অমাবশ্যা নিশি। আবার জগতের মার পূজা। শ্রীরামকৃষ্ণ ছোট খাটটিতে বালিশে হেলান দিয়া আছেন। কিন্তু অন্তর্মুখ, মাঝে মাঝে ভক্তদের সঙ্গে একটি-দুইটি কথা কহিতেছেন।
হঠাৎ মাস্টার ও ভক্তদের প্রতি তাকাইয়া বলিতেছেন, আহা, ছেলেটির কি ধ্যান! (হরিপদের প্রতি) — কেমন রে? কি ধ্যান!
হরিপদ — আজ্ঞা হাঁ, ঠিক কাষ্ঠের মতো।
শ্রীরামকৃষ্ণ (কিশোরীর প্রতি) — ও ছেলেটিকে জান? নিরঞ্জনের কিরকম ভাই হয়।
আবার সকলেই নিঃস্তব্ধ। হরিপদ ঠাকুরের পদসেবা করিতেছেন।
ঠাকুর বৈকালে চণ্ডীর গান শুনিয়াছেন। গানের ফুট উঠিতেছে। আস্তে আস্তে গাইতেছেন:
কে জানে কালী কেমন, ষড়দর্শনে না পায় দরশন।।
মূলাধারে সহস্রারে সদা যোগী করে মনন।
কালী পদ্মবনে হংসসনে হংসীরূপে করে রমণ।।
আত্মারামের আত্মাকালী, প্রমাণ প্রণবের মতন।
তিনি ঘটে ঘটে বিরাজ করেন ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছা যেমন।।
মায়ের উদরে ব্রহ্মাণ্ড-ভাণ্ড প্রকাণ্ড তা জান কেমন।
মহাকাল জেনেছেন কালীর মর্ম অন্য কেবা জানে তেমন।।
প্রসাদ ভাষে লোকে হাসে সন্তরণে সিন্ধু তরণ।
আমার মন বুঝেছে প্রাণ বুঝে না, ধরবে শশী হয়ে বামন।।
ঠাকুর উঠিয়া বসিলেন। আজ মায়ের পূজা — মায়ের নাম করিবেন! আবার উৎসাহের সহিত গাইতেছেন:
এ সব ক্ষেপা মায়ের খেলা
(যার মায়ার ত্রিভুবন বিভোলা) (মাগীর আপ্তভাবে গুপ্তলীলা)
সে যে আপনি ক্ষেপা, কর্তা ক্ষেপা, ক্ষেপা দুটো চেলা।।
কি রূপ কি গুণ ভঙ্গী, কি ভাব কিছুই যায় না বলা।
যার নাম জপিয়ে কপাল পোড়ে কণ্ঠে বিষের জ্বালা।।
সগুণে নির্গুণে বাঁধিয়ে বিবাদ, ঢ্যালা দিয়ে ভাঙছে ঢ্যালা।
মাগী সকল বিষয়ে সমান রাজী নারাজ কেবল কাজের বেলা।।
প্রসাদ বলে থাকো বসে ভবর্ণবে ভাসিয়ে ভেলা।
যখন আসবে জোয়ার উজিয়ে যাবে, ভাঁটিয়ে যাবে ভাঁটার বেলা।।
ঠাকুর গান করিতে করিতে মাতোয়ারা হইয়াছেন। বলিলেন, এ-সব মাতালের ভাবে গান। বলিয়া গাইতেছেন:
(১) – এবার কালী তোমায় খাব।
(২) – তাই তোমাকে সুধাই কালী।
(৩) – সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনোমোহিনী।
তুমি আপনি নাচ, আপনি গাও, আপনি দাও মা করতালি।।
আদিভূতা সনাতনী, শূন্যরূপা শশীভালী।
ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন, মুণ্ডমালা কোথায় পেলি।।
সবে রাত্রে তুমি যন্ত্রী, আমরা তোমার তন্ত্রে চলি।
যেমন রাখ তেমনি থাকি মা, যেমন বলাও তেমনি বলি।।
অশান্ত কমলাকান্ত দিয়ে বলে গালাগালি।
এবার সর্বনাশী ধরে অসি, ধর্মাধর্ম দুটো খেলি।।
(৪) – জয় কালী জয় কালী বলে যদি আমার প্রাণ যায়।
শিবত্ব হইব প্রাপ্ত, কাজ কি বারাণসী তায়।।
অনন্তরূপিণী কালী, কালীর অন্ত কেবা পায়?
কিঞ্চিৎ মাহাত্ম জেনে শিব পড়েছেন রাঙা পায়।।
গান সমাপ্ত হইল এমন সময়ে রাজনারায়ণের ছেলে দুটি আসিয়া প্রণাম করিল। নাটমন্দিরে বৈকালে রাজনারায়ণ চন্ডীর গান গাইয়াছিলেন, ছেলে দুটিও সঙ্গে সঙ্গে গাইয়াছিল। ঠাকুর ছেলে দুটির আঙ্গে আবার গাইতেছেন: ‘এ সব ক্ষেপা মেয়ের খেলা’।
ছোট ছেলেটি ঠাকুরকে বলিতেছেন, — ওই গানটি একবার যদি —
‘পরম দয়াল হে প্রভু’ —
ঠাকুর বলিলেন, “গৌর নিতাই তোমরা দুভাই?” — এই বলিয়া গানটি গাইতেছেন:
গৌর নিতাই তোমরা দুভাই পরম দয়াল হে প্রভু।
গান সমাপ্ত হইল। রামলালের ঘরে আসিয়াছেন। ঠাকুর বলিতেছেন, ‘একটু গা, আজ পূজা।’ রামলাল গাইতেছেন:
(১) – সমর আলো করে কার কামিনী!
সজল জলদ জিনিয়া কায়, দশনে প্রকাশে দামিনী।।
এলায়ে চাঁচর চিকুর পাশ, সুরাসুর মাঝে না করে ত্রাস
অট্টহাসে দানব নাশে, রণ প্রকাশে রঙ্গিণী।।
কিবা শোভা করে শ্রমজ বিন্দু, ঘনতনু ঘেরি কুমুদবন্ধু,
অমিয় সিন্ধু হেরিয়ে ইন্দু, মলিন এ কোন মোহিনী।।
এ কি অসম্ভব ভব পরাভব, পদতলে শবসদৃশ নীরব,
কমলাকান্ত কর অনুভব, কে বটে ও গজগামিনী।।
(২) – কে রণে নাচিছে বামা নীরদবরণী।
ঠাকুর প্রেমানন্দে নাচিতেছেন। নাচিতে নাচিতে গান ধরিলেন:
মজলো আমার মন ভ্রমরা শ্যামাপদ নীলকমলে!
গান ও নৃত্য সমাপ্ত হইল। ভক্তেরা আবার সকলে মেঝেতে বসিয়াছেন। ঠাকুরও ছোট খাটটিতে বসিলেন।
মাস্টারকে বলিতেছেন, তুমি এলে না, চণ্ডীর গান কেমন হলো।

==========

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

কালীপূজা রাত্রে সমাধিস্থ — সাঙ্গোপাঙ্গ সম্বন্ধে দৈববাণী
ভক্তেরা কেহ কেহ কালীমন্দিরে ঠাকুর দর্শন করিতে গমন করিলেন। কেহ বা দর্শন করিয়া একাকী গঙ্গাতীরে বাঁধাঘাটের উপর বসিয়া নির্জনে নিঃশব্দে নামজপ করিতেছেন। রাত্রি প্রায় ১১টা। মহানিশা। জোয়ার সবে আসিয়াছে — ভাগীরথী উত্তরবাহিনী। তীরস্থ দীপালোকে এক-একবার কালো জল দেখা যাইতেছে।
রামলাল পূজাপদ্ধতি নামক পুঁথি হস্তে মায়ের মন্দিরে একবার আসিলেন। পুঁথিখানি মন্দিরমধ্যে রাখিয়া দিবেন। মণি মাকে সতৃষ্ণ নয়নে দর্শন করিতেছেন দেখিয়া রামলাল বলিলেন, ভিতরে আসবেন কি? মণি অনুগৃহীত হইয়া প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন, মা বেশ সাজিয়াছেন। ঘর আলোকাকীর্ণ। মার সম্মুখে দুই সেজ; উপরে ঝাড় ঝুলিতেছে। মন্দিরতল নৈবেদ্যে পরিপূর্ণ। মার পাদপদ্মে জবাবিল্ব। নানাবিধ পুষ্প মালায় বেশকারী মাকে সাজাইয়াছেন। মণি দেখিলেন, সম্মুখে চামর ঝুলিতেছে। হঠাৎ মনে পড়িল, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই চামর লইয়া ঠাকুরকে কত ব্যজন করেন। তখন তিনি সঙ্কুচিতভাবে রামলালকে বলিতেছেন, “এই চামরটি একবার নিতে পারি?”
রামলাল অনুমতি প্রদান করিলেন; তিনি মাকে ব্যজন করিতে লাগিলেন। তখনও পূজা আরম্ভ হয় নাই।
যে সকল ভক্তেরা বাহিরে গিয়াছিলেন, তাঁহারা আবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরে আসিয়া মিলিত হইলেন।
শ্রীযুক্ত বেণী পাল নিমন্ত্রণ করিয়াছেন। আগামীকল্য সিঁথি ব্রাহ্মসমাজে যাইতে হইবে। ঠাকুরের নিমন্ত্রণ। নিমন্ত্রণ পত্রে কিন্তু তারিখ ভুল হইয়াছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — বেণী পাল নিমন্ত্রণ করেছে। তবে এরকম লিখলে কেন বল দেখি?
মাস্টার — আজ্ঞে, লেখাটি ঠিক হয় নাই। তবে অত ভেবে-চিন্তে লেখেন নাই।
ঘরের মধ্যে ঠাকুর দাঁড়াইয়া, বাবুরাম কাছে দাঁড়াইয়া। ঠাকুর বেণী পালের চিঠির কথা কহিতেছেন। বাবুরামকে স্পর্শ করিয়া দাঁড়াইয়া আছেন। হঠাৎ সমাধিস্থ!
ভক্তেরা সকলে তাঁহাকে ঘেরিয়া দাঁড়াইয়াছেন। এই সমাধিস্থ মহাপুরুষকে অবাক্‌ হইয়া দেখিতেছেন। ঠাকুর সমাধিস্থ; বাম পা বাড়াইয়া দাঁড়াইয়া আছেন — গ্রীবাদেশ ঈষৎ আকুঞ্চিত। বাবুরামের গ্রীবার পশ্চাদ্দেশে কানের কাছে হাতটি রহিয়াছে।
কিয়ৎক্ষণ পরে সমাধিভঙ্গ হইল। তখনও দাঁড়াইয়া। এইবার গালে হাত দিয়া যেন কত চিন্তিত হইয়া দাঁড়াইলেন।
ঈষৎ হাস্য করিয়া এইবার ভক্তদের সম্বোধন করিয়া বলিতেছেন —
শ্রীরামকৃষ্ণ — সব দেখলুম — কার কত দূর এগিয়েছে। রাখাল, ইনি (মণি), সুরেন্দ্র, বাবুরাম, অনেককে দেখলুম।
হাজরা — এখানকার?
শ্রীরামকৃষ্ণ — হাঁ।
হাজরা — বেশি কি বন্ধন?
শ্রীরামকৃষ্ণ — না।
হাজরা — নরেন্দ্রকে দেখলেন?
শ্রীরামকৃষ্ণ — দেখি নাই, কিন্তু এখনও বলতে পারি — একটু জড়িয়ে পড়েছে; কিন্তু সব্বায়ের হয়ে যাবে দেখলুম।
(মণির দিকে তাকাইয়া) — সব দেখলুম ঘুপটি মেরে রয়েছে!
ভক্তেরা অবাক্‌, দৈববাণীর ন্যায় অদ্ভুত সংবাদ শুনিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — কিন্তু একে (বাবুরামকে) ছুঁয়ে ওরূপ হল!
হাজরা — ফার্স্ট (First) কে?
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ চুপ করিয়া রহিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে বলিতেছেন, “নিত্যগোপালের মতো গোটাকতক হয়!”
আবার চিন্তা করিতেছেন। এখনও সেইভাবে দাঁড়াইয়া আছেন।
আবার বলিতেছেন — “অধর সেন — যদি কর্মকাজ কমে, — কিন্তু ভয় হয় — সাহেব আবার বকবে। যদি বলে, এ ক্যা হ্যায়!” (সকলের ঈষৎ হাস্য)
ঠাকুর আবার নিজাসনে গিয়া বসিলেন। ভক্তেরা মেঝেতে বসিলেন। বাবুরাম ও কিশোরী তাড়াতাড়ি করিয়া ছোট খাটটিতে ঠাকুরের পাদমূলে বসিয়া একে একে পদসেবা করিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (কিশোরীর দিকে তাকাইয়া) — আজ যে খুব সেবা!
রামলাল আসিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন; ও আতিশয় ভক্তিভাবে পদধূলি গ্রহণ করিলেন। মায়ের পূজা করিতে যাইতেছেন।
রামলাল (ঠাকুরের প্রতি) — তবে আমি আসি।
শ্রীরামকৃষ্ণ — ওঁ কালী, ওঁ কালী। সাবধানে পূজা করো। আবার মেড়া বলি দিতে হবে।
মহানিশা। পূজা আরম্ভ হইয়াছে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পূজা দেখিতে আসিয়াছেন। মার কাছে গিয়া দর্শন করিতেছেন। এইবার বলি হইবে — লোক কাতার দিয়া দাঁড়াইয়াছে। বধ্য পশুর উৎসর্গ হইল। পশুকে বলিদানের জন্য লইয়া যাইবার উদ্যোগ হইতেছে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির ত্যাগ করিয়া নিজের ঘরে ফিরিয়া আসিলেন।
ঠাকুরের সে অবস্থা নয়, পশুবধ দেখিতে পারিবেন না।
রাত দুইটা পর্যন্ত কোন কোন ভক্ত মা-কালীর মন্দিরে বসিয়াছিলেন। হরিপদ কালীঘরে আসিয়া বলিলেন, চলুন, তিনি ডাকছেন, খাবার সব প্রস্তুত। ভক্তেরা ঠাকুরের প্রসাদ পাইলেন ও যে যেখানে পাইলেন, একটু শুইয়া পড়িলেন।
ভোর হইল; মার মঙ্গল আরতি হইয়া গিয়াছে। মার সম্মুখে নাটমন্দির। নাটমন্দিরে যাত্রা হইতেছে, মা যাত্রা শুনিতেছেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কালীবাড়ির বৃহৎ পাকা উঠান দিয়া যাত্রা শুনিতে আসিতেছেন। মণি সঙ্গে সঙ্গে আসিতেছেন — ঠাকুরের কাছে বিদায় লইবেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — কেন তুমি এখন যাবে?
মণি — আজ আপনি সিঁথিতে বৈকালে যাবেন, আমারও ইচ্ছা আছে, তাই বাড়িতে একবার যাচ্ছি।
কথা কহিতে কহিতে মা-কালীর মন্দিরের কাছে আসিয়া উপস্থিত। অদূরে নাটমন্দির, যাত্রা হইতেছে। মণি সোপানমূলে ভূমিষ্ঠ হইয়া চরণ বন্দনা করিতেছেন।
ঠাকুর বলিলেন, “আচ্ছা এসো। আর দুখানা আটপৌরে নাইবার কাপড় আমার জন্য এনো।”
========

Post a Comment

0 Comments