একাদশ খণ্ড ~পঞ্চম ভাগ ~শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-শ্রীম কথিত
পঞ্চম ভাগ 

একাদশ খণ্ড

একাদশ খণ্ড ~পঞ্চম ভাগ ~শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত

===========

প্রথম পরিচ্ছেদ

১৮৮৩, ১৬ই অক্টোবর

দক্ষিণেশ্বরে কোজাগর লক্ষ্মীপূর্ণিমা — ১৮৮৩

[রাখাল, বলরামের পিতা, বেণী পাল, মাস্টার, মণি মল্লিক, ঈশান, কিশোরী (গুপ্ত) প্রভৃতি সঙ্গে ]

আজ মঙ্গলবার, ১৬ই অক্টোবর ১৮৮৩, (৩০শে আশ্বিন)। বলরামের পিতা মহাশয় ও অন্যান্য ভক্ত উপস্থিত আছেন। বলরামের পিতা পরমবৈষ্ণব, হাতে হরিনামের মালা সর্বদা জপ করেন।

গোঁড়া বৈষ্ণবেরা অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের তত পছন্দ করেন না। বলরামের পিতা শ্রীরামকৃষ্ণকে মাঝে মাঝে দর্শন করিতেছেন, তাঁহার ওই সকল বৈষ্ণবের ন্যায় ভাব নাই।

শ্রীরামকৃষ্ণ — যাদের উদার ভাব তারা সব দেবতাকে মানে — কৃষ্ণ, কালী, শিব, রাম ইত্যাদি।

বলরামের পিতা — হাঁ, যেমন এক স্বামী ভিন্ন পোশাক।

শ্রীরামকৃষ্ণ — কিন্তু নিষ্ঠাভক্তি একটি আছে। গোপীরা যখন মথুরায় গিয়েছিল তখন পাগড়ি-বাঁধা কৃষ্ণকে দেখে ঘোমটা দিল, আর বললে, ইনি আবার কে, আমাদের পীতধড়া মোহনচূড়া-পরা কৃষ্ণ কোথায়? হনুমানেরও নিষ্ঠাভক্তি। দ্বাপর যুগে দ্বারকায় যখন আসেন কৃষ্ণ রুক্মিণীকে বললেন, হনুমান রামরূপ না দেখলে সন্তুষ্ট হবে না। তাই রামরূপ ধরে বসলেন।

[শ্রীরামকৃষ্ণের অদ্ভুত অবস্থা — নিত্য-লীলাযোগ ]

“কে জানে বাপু, আমার এই একরকম অবস্থা। আমি কেবল নিত্য থেকে লীলায় নেমে আসি, আবার লীলা থেকে নিত্যে যাই।

“নিত্যে পঁহুছানোর নাম ব্রহ্মজ্ঞান। বড় কঠিন। একেবারে বিষয়বুদ্ধি না গেলে হয় না। হিমালয়ের ঘরে যখন ভগবতী জন্মগ্রহণ করলেন, তখন পিতাকে নানারূপে দর্শন দিলেন।১ হিমালয় বললেন, মা, আমি ব্রহ্মদর্শন করতে ইচ্ছা করি। তখন ভগবতী বলছেন, পিতা, যদি তা ইচ্ছা করেন তাহলে আপনার সাধুসঙ্গ করতে হবে। সংসার থেকে তফাত হয়ে নির্জনে মাঝে মাঝে সাধুসঙ্গ করবেন।

“সেই এক থেকেই অনেক হয়েছে — নিত্য থেকেই লীলা। এক অবস্থায় ‘অনেক’ চলে যায়, আবার ‘এক’ও চলে যায় — কেননা এক থাকলেই দুই। তিনি যে উপমারহিত — উপমা দিয়ে বুঝাবার জো নাই। অন্ধকার ও আলোর মধ্যে। আমরা যে আলো দেখি সে আলো নয় — এ জড় আলো নয়।”২

“আবার যখন তিনি অবস্থা বদলে দেন — যখন লীলাতে মন নামিয়ে আনেন — তখন দেখি ঈশ্বর-মায়া-জীব-জগৎ — তিনি সব হয়ে রয়েছেন।”৩

[ঈশ্বর কর্তা — “তুমি ও তোমার” ]

“আবার কখনও তিনি দেখান তিনি এই সমস্ত জীবজগৎ করেছেন — যেমন বাবু আর তার বাগান। তিনি কর্তা আর তাঁরই এই সমস্ত জীবজগৎ — এইটির নাম জ্ঞান। আর ‘আমি কর্তা’, ‘আমি গুরু’, ‘আমি বাবা’ — এরই নাম অজ্ঞান। আর আমার এই সমস্ত গৃহপরিবার, ধন, জন — এরই নাম অজ্ঞান।”

বলরামের পিতা — আজ্ঞে হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ — যতদিন না “তুমি কর্তা” এইটি বোধ হয় ততদিন ফিরে ফিরে আসতে হবে — আবার জন্ম হবে। “তুমি কর্তা” বোধ হলে আর পূর্নজন্ম হবে না।

“যতক্ষণ না তুঁহু তুঁহু করবে ততক্ষণ ছাড়বে না। গতায়াত পুর্নজন্ম হবেই — মুক্তি হবে না। আর ‘আমার’ ‘আমার’ বললেই বা কি হবে। বাবুর সরকার বলে ‘এটা আমাদের বাগান, আমাদের খাট, কেদারা।‘ কিন্তু বাবু যখন তাড়িয়া দেন, তার নিজের আম কাঠের সিন্দুকটা নিয়ে যাবার ক্ষমতা থাকে না!

‘আমি আর আমার’ সত্যকে আবরণ করে রেখেছে — জানতে দেয় না।”

[অদ্বৈতজ্ঞান ও চৈতন্যদর্শন ]

“অদ্বৈতজ্ঞান না হলে চৈতন্যদর্শন হয় না। চৈতন্যদর্শন হলে তবে নিত্যানন্দ। পরমহংস অবস্থায় এই নিত্যানন্দ।

“বেদান্তমতে অবতার নাই। সে-মতে চৈতন্যদেব অদ্বৈতের একটি ফুট।

“চৈতন্যদর্শন কিরূপ? এক-একবার চিনে দেশলাই জ্বেলে অন্ধকার ঘরে যেমন হঠাৎ আলো।”

[অবতার বা মানুষ রতন ]

“ভক্তিমতে অবতার। কর্তাভজা মেয়ে আমার অবস্থা দেখে বলে গেল, ‘বাবা, ভিতরে বস্তুলাভ হয়েছে, অত নেচো-টেচো না, আঙুর ফল তুলোর উপর যতন করে রাখতে হয়। পেটে ছেলে হলে শাশুড়ী ক্রমে ক্রমে খাটতে দেয় না। ভগবান দর্শনের লক্ষণ, ক্রমে কর্মত্যাগ হয়। এই মানুষের ভিতর মানুষ রতন আছে।

“আমার খাওয়ার সময় সে বলত, বাবা তুমি খাচ্ছো, না কারুকে খাওয়াচ্ছো?

“এই ‘আমি’ জ্ঞানই আবরণ করে রেখেছে। নরেন্দ্র বলেছিল ‘এ আমি যত যাবে, তাঁর আমি তত আসবে।’ কেদার বলে কুম্ভের ভিতরের মাটি যতখানি থাকবে, ততখানি এদিকে জল কমবে।

“কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, ভাই! অষ্টসিদ্ধির একটা সিদ্ধি থাকলে আমায় পাবে না। একটু শক্তি হতে পারে! গুটিকা সিদ্ধি; ঝাড়ানো, ফোঁকানো; ঔষধ-দেওয়া ব্রহ্মচারী; তবে লোকের একটু উপকার হয়। কেমন?

“তাই মার কাছে আমি কেবল শুদ্ধাভক্তি চেয়েছিলাম; সিদ্ধাই চাই নাই।”

বলরামের পিতা, বেণী পাল, মাস্টার, মণি মল্লিক প্রভৃতিকে এইকথা বলিতে বলিতে শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থ হইলেন। বাহ্যশূন্য, চিত্রার্পিতের ন্যায় বসিয়া আছেন। সমাধিভঙ্গের পর শ্রীরামকৃষ্ণ গান গাহিতেছেন:

হলাম যার জন্য পাগল তারে কই পেলাম সই

এইবার শ্রীযুক্ত রামলালকে গান গাহিতে বলিতেছেন। তিনি গাইতেছেন। প্রথমেই গৌরাঙ্গ সন্ন্যাস —

কি দেখিলাম রে কেশব ভারতীর কুটিরে,
অপরূপ জ্যোতিঃ, শ্রীগৌরাঙ্গ মূরতি,
দুনয়নে প্রেম বহে শতধারে।
গৌর মত্তমাতঙ্গের প্রায়, প্রেমাবেশে নাচে গায়,
কভু ধরাতে লুটায়, নয়নজলে ভাসে রে,
কাঁদে আর বলে হরি, স্বর্গ-মর্ত্য ভেদ করি, সিংহরবে রে;
আবার দন্তে তৃণ লয়ে কৃতাঞ্জলি হয়ে,
দাস্য মুক্তি যাচেন দ্বারে দ্বারে ৷৷

চৈতন্যদেবের এই ‘পাগল’ প্রেমোন্মাদ অবস্থা বর্ণনার ওর, ঠাকুরের ইঙ্গিতে রামলাল আবার গোপীদের উন্মাদ অবস্থা গাহিতেছেন:

ধোরো না ধোরো না রথচক্র, রথ কি চক্রে চলে।
যে চক্রের চক্রী হরি, যাঁর চক্রে জগৎ চলে।

গান — নবনীরদবরণ কিসে গণ্য শ্যামচাঁদ রূপ হেরে।
করেতে বাঁশি অধরে হাসি, রূপে ভুবন আলো করে।

১ দেবীভাগবত, সপ্তম স্কন্ধ — ৩১, ৩৪-৩৬ অধ্যায়

২ “এ জড় আলো নয়” — “তৎ জ্যোতিষাং জ্যোতিঃ”
… তচ্ছুভ্রং জ্যোতিষাৎ জ্যোতিস্তদ্‌ যদাত্মবিদো বিদুঃ। [মুণ্ডকোপনিষদ্‌, ২।২।৯]

৩ ত্বং জাতো ভবসি বিশ্বতোমুখঃ। [শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ্‌ ৪।৩]
=========

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

১৮৮৩, ১৬ই অক্টোবর

অস্পৃশ্য জাতি হরিনামে শুদ্ধ

হরিভক্তি হইলে আর জাতবিচার থাকে না। শ্রীযুক্ত মণি মল্লিককে বলিতেছেন, তুমি তুলসীদাসের সেই কথাটি বল তো।

মণি মল্লিক — চাতক, তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যায় — গঙ্গা, যমুনা, সরযূ আর কত নদী ও তড়াগ রয়েছে, কিন্তু কোন জল খাবে না। কেবল স্বাতিনক্ষত্রের বৃষ্টির জলের জন্য হাঁ করে থাকে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — অর্থাৎ তাঁর পাদপদ্মে ভক্তিই সার আর সব মিথ্যা।

[Problem of the untouchables — অস্পৃশ্য জাতি হরিণামে শুদ্ধ ]

মণি মল্লিক — আর একটি তুলসীদাসের কথা — অষ্টধাতু পরশমনী ছোঁয়ালে সোনা হয়ে যায়। তেমনি সব জাতি — চামার, চণ্ডাল পর্যন্ত হরিনাম করলে শুদ্ধ হয়। “বিনা হর্‌নাম চার জাত চামার।”

শ্রীরামকৃষ্ণ — যে চামড়া ছুঁতে নাই, সেই চামড়া পাট করার পর ঠাকুরঘরে লয়ে যাওয়া যায়।

“ঈশ্বরের নামে মানুষ পবিত্র হয়। তাই নামকীর্তন অভ্যাস করতে হয়। আমি যদু মল্লিকের মাকে বলেছিলাম, যখন মৃত্যু আসবে তখন সেই সংসার চিন্তাই আসবে। পরিবার, ছেলেমেয়েদের চিন্তা — উইল করবার চিন্তা — এই সব আসবে; ভগবানের চিন্তা আসবে না। উপায় তাঁর নামজপ, নামকীর্তন অভ্যাস করা। এই অভ্যাস যদি থাকে মৃত্যু সময় তাঁরই নাম মুখে আসবে। বিড়াল ধরলে পাখির ক্যাঁ ক্যাঁ বুলিই আসবে, তখন আর ‘রাম রাম’ ‘হরে কৃষ্ণ’ বলবে না।

“মৃত্যু সময়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া ভাল। শেষ বয়সে নির্জনে গিয়া কেবল ঈশ্বরচিন্তা ও তাঁহার নাম করা। হাতি নেয়ে যদি আস্তাবলে যায় তাহলে আর ধুলো কাদা মাখতে পারে না।”

বলরামের বাবা, মণি মল্লিক, বেণী পাল, এদের বয়স হয়েছে; তাই কি ঠাকুর, বিশেষ তাঁহাদের মঙ্গলের জন্য, এই সকল উপদেশ দিতেছেন?

শ্রীরামকৃষ্ণ আবার ভক্তদের সম্বোধন করিয়া কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — নির্জনে তাঁর চিন্তা ও নাম করতে বলেছি কেন? সংসারে রাতদিন থাকলে অশান্তি। দেখ না একহাত জমির জন্য ভায়ে ভায়ে খুনোখুনি। শিখরা (Sikhs) বলে, জমি, জরু আর টাকা এই তিনটির জন্য যত গোলমাল অশান্তি।

[রামচন্দ্র, সংসার ও যোগবাশিষ্ঠ — “মজার কুটি” ]

“তোমরা সংসারে আছ তা ভয় কি? রাম যখন সংসারত্যাগ করবার কথা বললেন, দশরথ চিন্তিত হয়ে বশিষ্ঠের শরণাগত হলেন। বশিষ্ঠ রামকে বললেন, রাম তুমি কেন সংসার ত্যাগ করবে? আমার সঙ্গে বিচার কর, ঈশ্বর ছাড়া কি সংসার? কি ত্যাগ করবে, কি বা গ্রহণ করবে? তিনি ছাড়া কিছুই নাই। তিনি ‘ঈশ্বর-মায়া-জীব-জগৎ’ রূপে প্রতীয়মান হচ্ছেন।”

বলরামের পিতা — বড় কঠিন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — সাধনের সময় এই সংসার “ধোঁকার টাটি”; আবার জ্ঞানলাভ হবার পর, তাঁকে দর্শনের পর, এই সংসার “মজার কুটি”।

[অবতার পুরুষে ঈশ্বরদর্শন — অবতার চৈতন্যদেব ]

“বৈষ্ণবগ্রন্থে আছে, বিশ্বাসে মিলয়ে কৃষ্ণ তর্কে বহুদূর।

“কেবল বিশ্বাস!

“কৃষ্ণকিশোরের কি বিশ্বাস! বৃন্দাবনে কূপ থেকে নীচ জাতি জল তুলে দিলে, তাকে বললে, তুই বল শিব। সে শিবনাম করার পর অমনি জল খেলে। সে বলত ঈশ্বরের নাম করেছে আবার কড়ি দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত! এ কি!

“রোগাদি জন্য তুলসী দিচ্ছে, কৃষ্ণকিশোর দেখে অবাক্‌!

“সাধুদর্শনের কথায় হলধারী বলেছিল, ‘কি আর দেখতে যাবো — পঞ্চভূতের খোল।’ কৃষ্ণকিশোর রাগ করে বললে, এমন কথা হলধারী বলেছে। সাধুর চিন্ময় দেহ জানে না।

“কালীবাড়ির ঘাটে আমাদের বলেছিল, তোমরা বলো — রাম! রাম! বলতে বলতে যেন আমার দিন কাটে।

“আমি কৃষ্ণকিশোরের বাড়ি যাই যেতাম, আমাকে দেখে নৃত্য।

“রামচন্দ্র লক্ষ্মণকে বলেছিলেন, ভাই, যেখানে দেখবে ঊর্জিতাভক্তি সেইখানে জানবে আমি আছি।

“যেমন চৈতন্যদেব। প্রেমে হাসে কাঁদে নাচে গায়। চৈতন্যদেব অবতার — ঈশ্বর অবতীর্ণ।”

শ্রীরামকৃষ্ণ গান গাইতেছেন:

ভাব হবে বইকি রে ভাবনিধি শ্রীগৌরাঙ্গের।
ভাবে হাসে কাঁদে নাচে গায়! (ফুকুরি ফুকুরি কান্দে)।
==========

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

১৮৮৩, ১৬ই অক্টোবর

দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ - নৃত্য ও ভাবাবিষ্ট
বলরামের পিতা, মণি মল্লিক, বেণী পাল প্রভৃতি বিদায় গ্রহণ করিতেছেন। সন্ধ্যার পর কাঁসারীপাড়ার হরিসভার ভক্তেরা আসিয়াছেন।

তাঁহাদের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ মত্ত মাতঙ্গের ন্যায় নৃত্য করিতেছেন।

নৃত্যের পর ভাবাবিষ্ট। বলছেন, আমি খানিকটা আপনি যাবো।

কিশোরী ভাবাবস্থায় পদসেবা করিতে যাইতেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ কারুকে স্পর্শ করিতে দিলেন না।

সন্ধ্যার পর ঈশান আসিয়াছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বসিয়া আছেন — ভাবাবিষ্ট। কিছুক্ষণ পরে ঈশানের সঙ্গে কথা কহিতেছেন। ঈশানের ইচ্ছা, গায়ত্রীর পুরশ্চরণ করা।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ঈশানের প্রতি) — তোমার যা মনোগত তাই করো। মনে আর সংশয় নাই তো?

[কলিতে নিগমের পথ নয় — আগমের পথ ]

ঈশান — আমি একরকম প্রায়শ্চিত্তের মতো সঙ্কল্প করেছিলাম।

শ্রীরামকৃষ্ণ — এ-পথে (আগমের পথে) কি তা হয় না? যিনিই ব্রহ্ম তিনিই শক্তি, কালী। ‘আমি কালীব্রহ্ম জেনে মর্ম ধর্মাধর্ম সব ছেড়েছি।’

ঈশান — চন্ডীর স্তবে আছে, ব্রহ্মই আদ্যাশক্তি। ব্রহ্ম-শক্তি অভেদ।

শ্রীরামকৃষ্ণ — এইটি মুখে বললে হয় না, ধারণা যখন হবে তখন ঠিক হবে।

“সাধনার পর চিত্তশুদ্ধি হলে ঠিক বোধ হবে তিনিই কর্তা, তিনিই মন-প্রাণ-বুদ্ধিরূপা। আমারা কেবল যন্ত্রস্বরূপ। ‘পঙ্কে বদ্ধ কর করী, পঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি।’

“চিত্তশুদ্ধি হলে বোধ হবে, পুরশ্চরণাদি কর্ম তিনিই করান। ‘যাঁর কর্ম সেই করে লোকে বলে করি আমি।’

“তাঁকে দর্শন হলে সব সংশয় মিটে যায়। তখন অনুকূল হাওয়া বয়। অনুকূল হাওয়া বইলে মাঝি যেমন পাল তুলে দিয়ে হালটি ধরে বসে থাকে, আর তামাক খায়, সেইরূপ ভক্ত নিশ্চিন্ত হয়।”

ঈশান চলিয়া গেলে শ্রীরামকৃষ্ণ মাস্টারের সহিত একান্তে কথা কহিতেছেন। জিজ্ঞাসা করিতেছেন, নরেন্দ্র, রাখাল, অধর, হাজরা এদের তোমার কিরূপ বোধ হয়, সরল কি না। আর আমাকে তোমার কিরূপ বোধ হয়। মাস্টার বলিতেছেন, “আপনি সরল আবার গভীর — আপনাকে বুঝা বড় কঠিন।”

শ্রীরামকৃষ্ণ হাসিতেছেন।
===============

Post a Comment

0 Comments