নবম খণ্ড-রামকৃষ্ণ কথামৃত-চতুর্থ ভাগ

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-শ্রীম কথিত
চতুর্থ ভাগ 

নবম খণ্ড
দক্ষিণেশ্বরে মন্দিরে রাখাল প্রভৃতি  ভক্তসঙ্গে

নবম খণ্ড-রামকৃষ্ণ কথামৃত-চতুর্থ ভাগ

==========

প্রথম পরিচ্ছেদ

১৮৮৩, ২৯শে ডিসেম্বর
দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে রাখাল, রাম, কেদার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে — বেদান্তবাদী সাধুসঙ্গে ব্রহ্মজ্ঞানের কথা

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ গাড়িতে উঠিয়াছেন — ৺ কালীঘাট দর্শনে যাইবেন। শ্রীযুক্ত অধর সেনের বাটী হইয়া যাইবেন — অধরও সেখান হইতে সঙ্গে যাইবেন। আজ শনিবার, অমাবস্যা; ২৯শে ডিসেম্বর, ১৮৮৩। বেলা ১টা হইবে।

গাড়ি তাঁহার ঘরের উত্তরের বারন্দার কাছে দাঁড়াইয়া আছে।

মণি গাড়ির দ্বারের কাছে আসিয়া দাঁড়াইয়াছেন।

মণি (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি) — আজ্ঞা, আমি কি যাব?

শ্রীরামকৃষ্ণ — কেন?

মণি — কলকাতার বাসা হয়ে একবার আসতাম।

শ্রীরামকৃষ্ণ (চিন্তিত হইয়া) — আবার যাবে? এখানে বেশ আছ।

মণি বাড়ি ফিরিবেন — কয়েক ঘন্টার জন্য, কিন্তু ঠাকুরের মত নাই।

রবিবার, ৩০শে ডিসেম্বর, পৌষ শুক্লা প্রতিপদ তিথি। বেলা তিনটা হইয়াছে। মণি গাছতলায় একাকী বেড়াইতেছেন, — একটি ভক্ত আসিয়া বলিলেন, প্রভু ডাকিতেছেন। ঘরে ঠাকুর ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন। মণি গিয়া প্রণাম করিলেন ও মেঝেতে ভক্তদের সঙ্গে বসিলেন।

কলিকাতা হইতে রাম, কেদার প্রভৃতি ভক্তেরা আসিয়াছেন। তাঁহাদের সঙ্গে একটি বেদান্তবাদী সাধু আসিয়াছেন। ঠাকুর যেদিন রামের বাগান দর্শন করিতে যান, সেই দিন এই সাধুটির সহিত দেখা হয়। সাধু পার্শ্বের বাগানের একটি গাছের তলায় একাকী একটি খাটিয়ায় বসিয়াছিলেন। রাম আজ ঠাকুরের আদেশে সেই সাধুটিকে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছেন। সাধুও ঠাকুরকে দর্শন করিবেন — ইচ্ছা করিয়াছেন।

ঠাকুর সাধুর সহিত আনন্দে কথা কহিতেছেন। নিজের কাছে ছোট তক্তাটির উপর সাধুকে বসাইয়াছেন। কথাবার্তা হিন্দীতে হইতেছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — এ-সব তোমার কিরূপ বোধ হয়?

বেদান্তবাদী সাধু — এ-সব স্বপ্নবৎ।

শ্রীরামকৃষ্ণ — ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা? আচ্ছা জী, ব্রহ্ম কিরূপ?

সাধু — শব্দই ব্রহ্ম। অনাহত শব্দ।

শ্রীরামকৃষ্ণ — কিন্তু জী, শব্দের প্রতিপাদ্য একটি আছেন। কেমন?

সাধু — বাচ্য১ ওই হ্যায়, বাচক ওই হ্যায়।

এই কথা শুনিতে শুনিতে ঠাকুর সমাধিস্থ হইলেন। স্থির, — চিত্রার্পিতের ন্যায় বসিয়া আছেন। সাধু ও ভক্তেরা অবাক্‌ হইয়া ঠাকুরের এই সমাধি অবস্থা দেখিতেছেন। কেদার সাধুকে বলিতেছেন —

“এই দেখো জী! ইস্‌কো সমাধি বোলতা হ্যায়।”

সাধু গ্রন্থেই সমাধির কথা পড়িয়াছেন, সমাধি কখনও দেখেন নাই।

ঠাকুর একটু একটু প্রকৃতিস্থ হইতেছেন ও জগন্মাতার সহিত কথা কহিতেছেন, “মা, ভাল হব — বেহুঁশ করিস নে — সাধুর সঙ্গে সচ্চিদানন্দের কথা কব! — মা, সচ্চিদানন্দের কথা নিয়ে বিলাস করব!”

সাধু অবাক্‌ হইয়া দেখিতেছেন ও এই সকল কথা শুনিতেছেন। এইবার ঠাকুর সাধুর সহিত কথা কহিতেছেন — বলিতেছেন — আব্‌  সোঽহম্‌ উড়ায়ে দেও। আব্‌ হাম্‌ তোম্‌; — বিলাস! (অর্থাৎ এখন সোঽহম্‌ — “সেই আমি” উড়ায়ে দাও; — এখন “আমি তুমি”)।

যতক্ষণ আমি তুমি রয়েছে ততক্ষণ মাও আছেন — এস তাঁকে নিয়ে আনন্দ করা যাক। এই কথা কি ঠাকুর বলিতেছেন?

কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর ঠাকুর পঞ্চবটীমধ্যে বেড়াইতেছেন, — সঙ্গে রাম, কেদার, মাস্টার প্রভৃতি।

[শ্রীরামকৃষ্ণের কেদারের প্রতি উপদেশ — সংসারত্যাগ ]

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — সাধুটিকে কিরকম দেখলে?

কেদার — শুষ্ক জ্ঞান! সবে হাঁড়ি চড়েছে, — এখনও চাল চড়ে নাই!

শ্রীরামকৃষ্ণ — তা বটে, কিন্তু ত্যাগী। সংসার যে ত্যাগ করেছে, সে অনেকটা এগিয়েছে।

“সাধুটি প্রবর্তকের ঘর। তাঁকে লাভ না করলে কিছুই হল না। যখন তাঁর প্রেমে মত্ত হওয়া যায়, আর কিছু ভাল লাগে না, তখন:

যতনে হৃদয়ে রেখো আদরিণী শ্যামা মাকে!
মন, তুই দেখ আর আমি দেখি আর যেন কেউ নাহি দেখে!

ঠাকুরের ভাবে কেদার একটি গান বলিতেছেন–

মনের কথা কইবো কি সই, কইতে মানা —
দরদী নইলে প্রাণ বাঁচে না।
মনের মানুষ হয় যে জনা,         ও তার নয়নেতে যায় গো চেনা,
ও সে দুই-এক জনা, ভাবে ভাসে রসে ডোবে,
ও সে উজান পথে করে আনাগোনা (ভাবের মানুষ)।

ঠাকুর নিজের ঘরে ফিরিয়াছেন। ৪টা বাজিয়াছে, — মা-কালীর ঘর খোলা হইয়াছে। ঠাকুর সাধুকে সঙ্গে করিয়া মা-কালীর ঘরে যাইতেছেন। মণি সঙ্গে আছেন।

কালীঘরে প্রবেশ করিয়া ঠাকুর ভক্তিভরে মাকে প্রণাম করিতেছেন। সাধুও হাতজোড় করিয়া মাথা নোয়াইয়া মাকে পুনঃপুনঃ প্রণাম করিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — কেমন জী, দর্শন!

সাধু (ভক্তিভরে) — কালী প্রধানা হ্যায়।

শ্রীরামকৃষ্ণ — কালী ব্রহ্ম অভেদ। কেমন জী?

সাধু — যতক্ষণ বহির্মুখ, ততক্ষণ কালী মানতে হবে। যতক্ষণ বহির্মুখ ততক্ষণ ভাল মন্দ; ততক্ষণ এটি প্রিয়, এটি ত্যাজ্য।

“এই দেখুন, নামরূপ তো সব মিথ্যা, কিন্তু যতক্ষণ আমি বহির্মুখ ততক্ষণ স্ত্রীলোক ত্যাজ্য। আর উপদেশের জন্য এটা ভাল, ওটা মন্দ; — নচেৎ ভ্রষ্টাচার হবে।”

ঠাকুর সাধুর সঙ্গে কথা কহিতে কহিতে ঘরে ফিরিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মণির প্রতি) — দেখলে, — সাধু কালীঘরে প্রণাম করলে!

মণি — আজ্ঞা, হাঁ!

পরদিন সোমবার, ৩১শে ডিসেম্বর (১৭ই পৌষ, শুক্লা দ্বিতীয়া)। বেলা ৪টা হইবে। ঠাকুর ভক্তসঙ্গে ঘরে বসিয়া আছেন। বলরাম, মণি, রাখাল, লাটু, হরিশ প্রভৃতি আছেন। ঠাকুর মণিকে ও বলরামকে বলিতেছেন —

[মুখে জ্ঞানের কথা — হলধারীকে ঠাকুরের তিরস্কার কথা ]

“হলধারীর জ্ঞানীর ভাব ছিল। সে অধ্যাত্ম, উপনিষৎ, — এই সব রাতদিন পড়ত। এদিকে সাকার কথায় মুখ ব্যাঁকাত। আমি যখণ কাঙালীদের পাতে একটু একটু খেলাম, তখন বললে, ‘তোর ছেলেদের বিয়ে কেমন করে হবে!’ আমি বললাম, ‘তবে রে শ্যালা, আমার আবার ছেলেপিলে হবে! তোর গীতা, বেদান্ত পড়ার মুখে আগুন!’ দেখো না, এদিকে বলছে জগৎ মিথ্যা! — আবার বিষ্ণুঘরে নাক সিটকে ধ্যান!”

সন্ধ্যা হইল। বলরামাদি ভক্তেরা কলিকাতায় চলিয়া গিয়াছেন। ঘরে ঠাকুর মার চিন্তা করিতেছেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুরবাড়িতে আরতির সুমধুর শব্দ শোনা যাইতে লাগিল।

রাত্রি প্রায় ৮টা হইয়াছে। ঠাকুর ভাবে সুমধুর স্বরে সুর করিয়া মার সহিত কথা কহিতেছেন। মণি মেঝেতে বসিয়া আছেন।

[ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও বেদান্ত ]

ঠাকুর মধুর নাম উচ্চারণ করিতেছেন — হরি ওঁ! হরি ওঁ! ওঁ! মাকে বলিতেছেন — “ও মা! ব্রহ্মজ্ঞান দিয়ে বেহুঁশ করে রাখিস নে! ব্রহ্মজ্ঞান চাই না মা! আমি আনন্দ করব! বিলাস করব!”

আবার বলিতেছেন — “বেদান্ত জানি না মা! জানতে চাই না মা! — মা, তোকে পেলে বেদবেদান্ত কত নিচে পড়ে থাকে!

কৃষ্ণ রে! তোরে বলব, খা রে — নে রে — বাপ! কৃষ্ণ রে! বলব, তুই আমার জন্য দেহধারণ করে এসেছিস বাপ।”

১ বাচ্যবাচকভেদেন ত্বমেব পরমেশ্বর             [অধ্যাত্ম রামায়ণ]

============

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

১৮৮৪, ২রা জানুয়ারি

জ্ঞানপথ ও বিচারপথ — ভক্তিযোগ ও ব্রহ্মজ্ঞান

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ঘরে বসিয়া আছেন। রাত্রি প্রায় ৮টা হইবে। আজ পৌষ শুক্লা পঞ্চমী, বুধবার, ২রা জানুয়ারি, ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দ। ঘরে রাখাল ও মণি আছেন। মণির আজ প্রভুসঙ্গে একবিংশতি দিবস।

ঠাকুর মণিকে বিচার করিতে বারণ করিয়াছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (রাখালের প্রতি) — বেশি বিচার করা ভাল না। আগে ঈশ্বর তারপর জগৎ — তাঁকে লাভ করলে তাঁর জগতের বিষয়ও জানা যায়।

(মণি ও রাখালের প্রতি) — “যদু মল্লিকের সঙ্গে আলাপ করলে তার কত বাড়ি, বাগান, কোম্পানির কাগজ, সব জানতে পারা যায়।

“তাই তো ঋষিরা বাল্মীকিকে ‘মরা’ ‘মরা’ জপ করতে বললেন।

“ওর একটু মানে আছে; ‘ম’ মানে ঈশ্বর, ‘রা’ মানে জগৎ — আগে ঈশ্বর, তারপরে জগৎ।”

[কৃষ্ণকিশোরের সহিত ‘মরা’ মন্ত্রকথা ]

“কৃষ্ণকিশোর বলেছিল, ‘মরা’ ‘মরা’ শুদ্ধ মন্ত্র — ঋষি দিয়েছেন বলে। ‘ম’ মানে ঈশ্বর, ‘রা’ মানে জগৎ।

“তাই আগে বাল্মীকির মতো সব ত্যাগ করে নির্জনে গোপনে ব্যাকুল হয়ে কেঁদে কেঁদে ঈশ্বরকে ডাকতে হয়। আগে দরকার ঈশ্বরদর্শন! তারপর বিচার — শাস্ত্র, জগৎ।”

[ঠাকুরের রাস্তায় ক্রন্দন — “মা বিচার-বুদ্ধিতে বজ্রাঘাত দাও” — ১৮৬৮ ]

(মণির প্রতি) — “তাই তোমাকে বলছি, — আর বিচার করো না। আমি ঝাউতলা থেকে উঠে যাচ্ছিলাম ওই কথা বলতে। বেশি বিচার করলে শেষে হানি হয়। শেষে হাজরার মতো হয়ে যাবে। আমি রাত্রে একলা রাস্তায় কেঁদে কেঁদে বেড়াতাম আর বলেছিলাম —

‘মা, বিচার-বুদ্ধিতে বজ্রাঘাত দাও।’

“বল, আর (বিচার) করবে না?”

মণি — আজ্ঞা, না।

শ্রীরামকৃষ্ণ — ভক্তিতেই সব পাওয়া যায়। যারা ব্রহ্মজ্ঞান চায়, যদি ভক্তির রাস্তা ধরে থাকে, তারা ব্রহ্মজ্ঞানও পাবে।

“তাঁর দয়া থাকলে কি জ্ঞানের অভাব থাকে? ও-দেশে ধান মাপে, যেই রাশ ফুরোয় অমনি একজন রাশ ঠেলে দেয়! মা জ্ঞানের রাশ ঠেলে দেন।”

[পদ্মলোচনের ঠাকুরের প্রতি ভক্তি — পঞ্চবটীতে সাধনকালে প্রার্থনা ]

“তাঁকে লাভ করলে পণ্ডিতদের খড়কুটো বোধ হয়। পদ্মলোচন বলেছিল, ‘তোমার সঙ্গে কৈবর্তের বাড়িতে যাব, তার আর কি? — তোমার সঙ্গে হাড়ির বাড়ি গিয়ে থাকতে পারি!’

“ভক্তি দ্বারাই সব পাওয়া যায়। তাঁকে ভালবাসতে পারলে আর কিছুরই অভাব থাকে না। ভগবতির কাছে কার্তিক আর গণেশ বসেছিলেন। তাঁর গলায় মণিময় রত্নমালা। মা বললেন, ‘যে ব্রহ্মাণ্ড আগে প্রদক্ষিণ করে আসতে পারবে, তাকে এই মালা দিব।’ কার্তিক তৎক্ষণাৎ ক্ষণবিলম্ব না করে ময়ূরে চড়ে বেরিয়ে গেলেন। গণেশ আস্তে আস্তে মাকে প্রদক্ষিণ করে প্রণাম করিলেন। গণেশ জানে মার ভিতরেই ব্রহ্মাণ্ড! মা প্রসন্না হয়ে গণেশের গলায় হার পরিয়ে দিলেন। অনেকক্ষণ পরে কার্তিক এসে দেখে যে, দাদা হার পরে বসে আছে।

“মাকে কেঁদে কেঁদে আমি বলেছিলাম, ‘মা, বেদ-বেদান্তে কি আছে, আমায় জানিয়ে দাও — পুরাণ তন্ত্রে কি আছে, আমায় জানিয়ে দাও।’ তিনি একে একে আমায় সব জানিয়ে দিয়েছেন।

“তিনি আমাকে সব জানিয়ে দিয়েছেন, — কত সব দেখিয়ে দিয়েছেন।”

[সাধনকালে ঠাকুরের দর্শন — শিব-শক্তি, নৃমুণ্ডস্তূপ, গুরুকর্ণধার, সচ্চিদানন্দ-সাগর ]

“একদিন দেখালেন, চর্তুদিকে শিব আর শক্তি। শিব-শক্তির রমণ। মানুষ, জীবজন্তু, তরুলতা, সকলের ভিতরেই সেই শিব আর শক্তি — পুরুষ আর প্রকৃতি। এদের রমণ।

“আর-একদিন দেখালেন — নৃমুণ্ডস্তূপাকার! — পর্বতাকার! আর কিছুই নাই! — আমি তার মধ্যে একলা বসে!

“আর-একবার দেখালেন মহাসমুদ্র! আমি লবণ-পুত্তলিকা হয়ে মাপতে যাচ্ছি! মাপতে গিয়ে গুরুর কৃপায় পাথর হয়ে গেলুম! — দেখলাম জাহাজ একখানা; — অমনি উঠে পড়লাম! — গুরু কর্ণধার! (মণির প্রতি) সচ্চিদানন্দ গুরুকে রোজ তো সকালে ডাকো?”

মণি — আজ্ঞা, হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ — গুরু কর্ণধার। তখন দেখছি, আমি একটি, তুমি একটি। আবার লাফ দিয়ে পড়ে মীন হলাম। সচ্চিদানন্দ-সাগরে আনন্দে বেড়াচ্চি দেখলাম।

“এ-সব অতি গুহ্যকথা! বিচার করে কি বুঝবে? তিনি যখন দেখিয়ে দেন, তখন সব পাওয়া যায় — কিছুরই অভাব থাকে না।”

=============

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

১৮৮৪, ৫ই জানুয়ারি

সাধনকালে বেলতলায় ধ্যান ১৮৫৯-৬১ — কামিনী-কাঞ্চনত্যাগ

[শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মভূমি গমন — রঘুবীরের জমি রেজিস্ট্রি — ১৮৭৮-৮০ ]

ঠাকুরের মধ্যাহ্ন সেবা হইয়াছে। বেলা প্রায় ১টা। শনিবার, ৫ই জানুয়ারি। মণির আজ প্রভুসঙ্গে ত্রয়োবিংশতি দিবস।

মণি আহারান্তে নবতে ছিলেন — হঠাৎ শুনিলেন, কে তাহার নাম ধরিয়া তিন-চারবার ডাকিলেন। বাহিরে আসিয়া দেখিলেন, ঠাকুরের ঘরের উত্তরের লম্বা বারান্দা হইতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাহাকে ডাকিতেছেন। মণি আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিলেন।

দক্ষিণের বারান্দায় ঠাকুর মণির সহিত বসিয়া কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — তোমরা কিরকম ধ্যান কর? আমি বেলতলায় স্পষ্ট নানা রূপ দর্শন করতাম। একদিন দেখলাম সামনে টাকা, শাল, একসরা সন্দেশ, দুজন মেয়েমানুস। মনকে জিজ্ঞাসা করলাম, মন! তুই এ-সব কিছু চাস? — সন্দেশ দেখলাম গু! মেয়েদের মধ্যে একজনের ফাঁদি নথ। তাদের ভিতর বাহির সব দেখতে পাচ্ছি — নাড়ীভুঁড়ি, মল-মূত্র, হাড়-মাংস, রক্ত। মন কিছুই চাইলে না।

“তাঁর পাদপদ্মেতেই মন রহিল। নিক্তির নিচের কাঁটা আর উপরের কাঁটা — মন সেই নিচের কাঁটা। পাছে উপরের কাঁটা (ঈশ্বর) থেকে মন বিমুখ হয় সদাই আতঙ্ক। একজন আবার শূল হাতে সদাই কাছে এসে বসে থাকত; ভয় দেখালে, নিচের কাঁটা উপরের কাঁটা থেকে তফাত হলেই এর বাড়ি মারব।

“কিন্তু কামিনী-কাঞ্চনত্যাগ না হলে হবে না। আমি তিন ত্যাগ করেছিলাম — জমিন, জরু, টাকা।১রঘুবীরের নামের জমি ও-দেশে রেজিস্ট্রি করতে গিছলাম। আমায় সই করতে বললে। আমি সই করলুম না। ‘আমার জমি’ বলে তো বোধ নাই। কেশব সেনের গুরু বলে খুব আদর করেছিল। আম এনে দিলে। তা বাড়ি নিয়ে যাবার জো নাই। সন্ন্যাসীর সঞ্চয় করতে নাই।

“ত্যাগ না হলে কেমন করে তাঁকে লাভ করা যাবে! যদি একটা জিনিসের পর আর একটা জিনিস থাকে, তাহলে প্রথম জিনিসটাকে না সরালে, কেমন করে একটা জিনিস পাবে?

“নিষ্কাম হয়ে তাঁকে ডাকতে হয়। তবে সকাম ভজন করতে করতে নিষ্কাম হয়। ধ্রুব রাজ্যের জন্য তপস্যা করেছিলেন, কিন্তু ভগবানকে পেয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যদি কাচ কুড়ুতে এসে কেউ কাঞ্চন পায়, তা ছাড়বে কেন’?”

[দয়া, দানাদি ও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ — চৈতন্যদেবের দান ]

“সত্ত্বগুণ এলে তবে তাঁকে লাভ করা যায়।

“দানাদি কর্ম সংসারী লোকের প্রায় সকামই হয় — সে ভাল না। তবে নিষ্কাম করলে ভাল। কিন্তু নিষ্কাম করা বড় কঠিন।

“সাক্ষাৎকার হলে ঈশ্বরের কাছে কি প্রার্থনা করবে যে ‘আমি কতকগুলো পুকুর, রাস্তা, ঘাট, ডিস্পেনসারি, হাসপাতাল — এই সব করব, ঠাকুর আমায় বর দাও। তাঁর সাক্ষাৎকার হলে ও-সব বাসনা একপাশে পড়ে থাকে।

“তবে দয়ার কাজ — দানাদি কাজ — কি কিছু করবে না?

“তা নয়। সামনে দুঃখ কষ্ট দেখলে টাকা থাকলে দেওয়া উচিত। জ্ঞানী বলে, ‘দে রে দে রে, এরে কিছু দে।’ তা না হলে, ‘আমি কি করতে পারি, — ঈশ্বরই কর্তা আর সব অকর্তা’ এইরূপ বোধ হয়।

“মহাপুরুষেরা জীবের দুঃখে কাতর হয়ে ভগবানের পথ দেখিয়ে দেন। শঙ্করাচার্য জীবশিক্ষার জন্য ‘বিদ্যার আমি’ রেখেছিলেন।

“অন্নদানের চেয়ে জ্ঞানদান, ভক্তিদান আরও বড়। চৈতন্যদেব তাই আচণ্ডালে ভক্তি বিলিয়েছিলেন। দেহের সুখ-দুঃখ তো আছেই। এখানে আম খেতে এসেছ, আম খেয়ে যাও। জ্ঞান-ভক্তির প্রয়োজন। ঈশ্বরই বস্তু আর সব অবস্তু।”

[স্বাধীন ইচ্ছা (Free will) কি আছে, ঠাকুরের সিদ্ধান্ত ]

“তিনি সব কচ্ছেন। যদি বল তাহলে লোকে পাপ করতে পারে। তা নয় — যার ঠিক বোধ হয়েছে ‘ঈশ্বর কর্তা আমি অকর্তা’ তার আর বেতালে পা পড়ে না।

“ইংলিশম্যান-রা যাকে স্বাধীন ইচ্ছা (Free will) বলে, সেই স্বাধীন ইচ্ছাবোধ তিনিই দিয়ে রাখেন।

“যারা তাঁকে লাভ করে নাই, তাদের ভিতর ওই স্বাধীন ইচ্ছাবোধ না দিলে পাপের বৃদ্ধি হত। নিজের দোষে পাপ কচ্ছি, এ-বোধ যদি তিনি না দিতেন, তাহলে পাপের আরও বৃদ্ধি হত।

“যারা তাঁকে লাভ করেছে, তারা জানে দেখতেই ‘স্বাধীন ইচ্ছা’ — বস্তুতঃ তিনিই যন্ত্রী, আমি যন্ত্র। তিনি ইঞ্জিনিয়ার, আমি গাড়ি।”



১ ভিক্ষুঃ সৌবর্ণাদীনাং নৈব পরিগ্রহেৎ
যস্মাদভিক্ষুর্হিরণ্যং রসেন দৃষ্টং চ স ব্রহ্মহা ভবেৎ।
যস্মাদভিক্ষুর্হিরণ্যং রসেন স্পৃষ্টং চেৎ পৌল্কসো ভবেৎ।
যস্মদভিক্ষুর্হিরণ্যং রসেন গ্রাহ্যং চ স আত্মহা ভবেৎ।
তস্মাদভিক্ষুর্হিরণ্যং রসেন ন দৃষ্টঞ্চ স্পৃষ্টঞ্চ ন গ্রাহ্যঞ্চ।                     [পরমহংসোপনিষদ্‌]

===========

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

১৮৮৪, ৫ই জানুয়ারি

গুরুদেব শ্রীরামকৃষ্ণ — ভক্তজন্য ক্রন্দন ও প্রার্থনা

বেলা চারিটা বাজিয়াছে। পঞ্চবটীঘরে শ্রীযুক্ত রাখাল, আরও দু-একটি ভক্ত মণির কীর্তন গান শুনিতেছেন —

গান — ঘরের বাহিরে দণ্ডে শতবার তিলে তিলে এসে যায়।

রাখাল গান শুনিয়া ভাবাবিষ্ট হইয়াছেন।

কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পঞ্চবটিতে আসিয়াছেন। তাঁহার সঙ্গে বাবুরাম, হরিশ — ক্রমে রাখাল ও মণি।

রাখাল — ইনি আজ বেশ কীর্তন করে আনন্দ দিয়েছেন।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবিষ্ট হইয়া গান গাহিতেছেন:

বাঁচলাম সখি, শুনি কৃষ্ণনাম (ভাল কথার মন্দও ভাল)।

(মণির প্রতি) — এই সব গান গাইবে — ‘সব সখি মিলি বৈঠল, (এই তো রাই ভাল ছিল)। (বুঝি হাট ভাল!)’

আবার বলিতেছেন, “এই আর কি! — ভক্তি, ভক্ত নিয়ে থাকা।”

[শ্রীরাধা ও যশোদা সংবাদ — ঠাকুরের “আপনার লোক” ]

“কৃষ্ণ মথুরায় গেলে যশোদা শ্রীমতীর কাছে এসেছিলেন। শ্রীমতী ধ্যানস্থ ছিলেন। তারপর যশোদাকে বললেন, ‘আমি অদ্যাশক্তি, তুমি আমার কাছে কিছু বর লও।’ যশোদা বললেন, ‘বর আর কি দিবে! — তবে এই বলো — যেন কায়মনোবাক্যে তারই সেবা করতে পারি, — যেন এই চক্ষে তার ভক্তের দর্শন হয়; — এই মনে তার ধ্যান চিন্তা যেন হয় — আর বাক্য দ্বারা তার নামগুনগান যেন হয়।’

“তবে যাদের খুব পাকা হয়ে গেছে, তাদের ভক্ত না হলেও চলে — কখন কখন ভক্ত ভাল লাগে না। পঙ্খের কাজের উপর চুনকাম ফেটে যায় অর্থাৎ যার তিনি অন্তরে বাহিরে তাদের এইরূপ অবস্থা।”

ঠাকুর ঝাউতলা হইতে ফিরিয়া আসিয়া পঞ্চবটীমূলে মণিকে আবার বলিতেছেন — “তোমার মেয়ে সুর — এইরকম গান অভ্যাস করতে পার? — ‘সখি সে বন কত দূর! — যে বনে আমার শ্যামসুন্দর।’

(বাবুরাম দৃষ্টে, মণির প্রতি) — “দেখ, যারা আপনার তারা হল পর — রামলাল আর সব যেন আর কেউ। যারা পর তারা হল আপনার, — দেখ না, বাবুরামকে বলছি — ‘বাহ্যে যা — মুখ ধো।’ এখন ভক্তরাই আত্মীয়।”

মণি — আজ্ঞা, হাঁ।

[উন্মাদের পূর্বে পঞ্চবটীতে সাধন ১৮৫৭-৫৮ — চিচ্ছক্তি ও চিদাত্মা ]

শ্রীরামকৃষ্ণ (পঞ্চবটী দৃষ্টে) — এই পঞ্চবটীতে বসতাম। কালে উন্মাদ হলাম। তাও গেল। কালই ব্রহ্ম। যিনি কালের সহিত রমণ করেন, তিনিই কালী — আদ্যাশক্তি। অটলকে টলিয়ে দেন।

এই বলিয়া ঠাকুর গান গাহিতেছেন — ‘ভাব কি ভেবে পরাণ গেল। যার নামে হর কাল, পদে মহাকাল, তার কালোরূপ কেন হল!’

“আজ শনিবার, মা-কালীর ঘরে যেও।”

বকুলতলার নিকট আসিয়া ঠাকুর মণিকে বলিতেছেন —

“চিদাত্মা আর চিচ্ছক্তি। চিদাত্মা পুরুষ, চিচ্ছক্তি প্রকৃতি। চিদাত্মা শ্রীকৃষ্ণ, চিচ্ছক্তি শ্রীরাধা। ভক্ত ওই চিচ্ছক্তির এক-একটি রূপ।

“অন্যান্য ভক্তেরা সখীভাব বা দাসভাবে থাকবে। এই মূলকথা।”

সন্ধ্যার পর ঠাকুর কালীঘরে গিয়াছেন। মণি সেখানে মার চিন্তা করিতেছেন দেখিয়া ঠাকুর প্রসন্ন হইয়াছেন।

[ভক্তজন্য জগন্মাতার কাছে ক্রন্দন — ভক্তদের আশীর্বাদ ]

সমস্ত দেবালয়ে আরতি হইয়া গেল। ঠাকুর ঘরে তক্তার উপর বসিয়া মার চিন্তা করিতেছেন। মেঝেতে কেবল মণি বসিয়া আছেন।

ঠাকুর সমাধিস্থ হইয়াছেন।

কিয়ৎক্ষণ পরে সমাধু ভঙ্গ হইতেছে। এখন ভাবের পূর্ণ মাত্রা — ঠাকুর মার সঙ্গে কথা কহিতেছেন। ছোটছেলে যেমন মার কাছে আবদার করে কথা কয়। মাকে করুণস্বরে বলিতেছেন, “ওমা, কেন সে রূপ দেখালি নি! সেই ভুবনমোহন রূপ! এত করে তোকে বললাম! তা তোকে বললে তো তুই শুনবিনি! তুই ইচ্ছাময়ী।” সুর করে মাকে এই কথাগুলি বললেন, শুনলে পাষাণ বিগলিত হয়। ঠাকুর আবার মার সঙ্গে কথা কহিতেছেন —

“মা বিশ্বাস চাই। যাক শালার বিচার। সাত চোনার বিচার এক চোনায় যায়। বিশ্বাস চাই (গুরুবাক্যে বিশ্বাস) — বালকের মতো বিশ্বাস। মা বলেছে, ওখানে ভূত আছে, তা ঠিক জেনে আছে, — যে ভূত আছে। মা বলেছে, ওখানে জুজু। তো তাই ঠিক জেনে আছে। মা বলেছে, ও তোর দাদা হয় — তো জেনে আছে পাঁচ সিকে পাঁচ আনা দাদা। বিশ্বাস চাই!

“কিন্তু মা! ওদেরই বা দোষ কি! ওরা কি করবে! বিচার একবার তো করে নিতে হয়! দেখ না ওই সেদিন এত করে বললাম, তা কিছু হল না — আজ কেন একেবারে — * * * *”

ঠাকুর মার কাছে করুণ গদ্‌গদস্বরে কাঁদিতে কাঁদিতে প্রার্থনা করিতেছেন। কি আশ্চর্য! ভক্তদের জন্য মার কাছে কাঁদছেন — “মা, যারা যারা তোমার কাছে আসছে, তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করো! সব ত্যাগ করিও না মা! আচ্ছা, শেষে যা হয় করো!

“মা, সংসারে যদি রাখো, তো এক-একবার দেখা দিস! না হলে কেমন করে থাকবে। এক-একবার দেখা না দিলে উৎসাহ কেমন করে মা! তারপর শেষে যা হয় করো!”

ঠাকুর এখনও ভাবাবিষ্ট। সেই অবস্থায় হঠাৎ মণিকে বলিতেছেন, “দেখো, তুমি যা বিচার করেছো, অনেক হয়েছে। আর না। বল আর করবে না?”

মনী করজোড়ে বলিতেছেন, আজ্ঞা না।

শ্রীরামকৃষ্ণ — অনেক হয়েছে। তুমি প্রথম আসতে মাত্র তোমায় তো আমি বলেছিলাম — তোমার ঘর — আমি তো সব জানি?

মণি — (কৃতাঞ্জলি) — আজ্ঞা হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ — তোমার ঘর, তুমি কে, তোমার অন্তর বাহির, তোমার আগেকার কথা, তোমার পরে কি হবে — এ-সব তো আমি জানি?

মণি (করজোড়ে) — আজ্ঞা হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ — ছেলে হয়েছে শুনে বকেছিলাম। এখন গিয়ে বাড়িতে থাকো — তাদের জানিও যেন তুমি তাদের আপনার। ভিতরে জানবে তুমিও তাদের আপনার নও, তারাও তোমার আপনার নয়।

মণি চুপ করিয়া আছেন। ঠাকুর আবার কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — আর বাপের সঙ্গে প্রীত করো — এখন উড়তে শিখে — তুমি বাপকে অষ্টাঙ্গে প্রণাম করতে পারবে না?

মণি (করজোড়ে) — আজ্ঞা হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ — তোমায় আর কি বলব, তুমি তো সব জানো? — সব তো বুঝেছো?

(মণি চুপ করিয়া আছেন।)

ঠাকুর — সব তো বুঝেছো?

মণি — আজ্ঞা, একটু একটু বুঝেছি।

শ্রীরামকৃষ্ণ — অনেকটা তো বুঝেছো। রাখাল যে এখানে আছে, ওর বাপ সন্তুষ্ট আছে।

মণি হাতজোড় করিয়া চুপ করিয়া আছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ আবার বলিতেছেন, “তুমি যা ভাবছো তাও হয়ে যাবে।”

[ভক্তসঙ্গে কীর্তনানন্দে — মা ও জননী — কেন নরলীলা ]

ঠাকর এইবার প্রকৃতিস্থ হইয়াছেন। ঘরে রাখাল, রামলাল। রামলালকে গান গাহিতে বলিতেছেন। রামলাল গান গাহিতেছেন:

গান — সমর আলো করে কার কামিনী।

গান — কে রণে নাচিছে বামা নীরদবরণী।

শোণিত সায়রে যেন ভাসিছে নব নলিনী ৷৷

শ্রীরামকৃষ্ণ — মা আর জননী। যিনি জগৎরূপে আছেন — সর্বব্যাপী হয়ে তিনিই মা। জননী যিনি জন্ম স্থান। আমি মা বলতে বলতে সমাধিস্থ হতুম; — মা বলতে বলতে যেন জগতের ঈশ্বরীকে টেনে আনতুম! যেমন জেলেরা জাল ফেলে, তারপর আনেকক্ষণ পরে জাল গুটোতে থাকে। বড় বড় মাছ সব পড়েছে।

[গৌরী পণ্ডিতের কথা — কালী ও শ্রীগৌরাঙ্গে এক ]

“গৌরী বলেছিল, কালী গৌরাঙ্গ এক বোধ হলে, তবে ঠিক জ্ঞান হয়। যিনি ব্রহ্ম তিনিই শক্তি (কালী)। তিনি নবরূপে শ্রীগৌরাঙ্গ।”

ঠাকুর কি ইঙ্গিত করিয়া বলিতেছেন, যিনি আদ্যাশক্তি তিনিই নররূপী শ্রীরামকৃষ্ণ হইয়া আসিয়াছেন। শ্রীযুক্ত রামলাল ঠাকুরের আদেশে আবার গাহিতেছেন — এবারে শ্রীগৌরাঙ্গলীলা।

গান — কি দেখিলাম রে, কেশব ভারতীর কুটিরে, অপরূপ জ্যোতিঃ,

শ্রীগৌরাঙ্গমূরতি, দু’নয়নে প্রেম বহে শতধারে!

গান — গৌর প্রেমের ঢেউ লেগেছে গায়।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মণির প্রতি) — যাঁরই নিত্য তাঁরই লীলা। ভক্তের জন্য লীলা। তাঁকে নররূপে দেখতে পেলে তবে তো ভক্তেরা ভালবাসতে পারবে, তবেই ভাই-ভগিনী, বাপ-মা সন্তানের মতো স্নেহ করতে পারবে।

“তিনি ভক্তের ভালবাসার জন্য ছোটটি হয়ে লীলা করতে আসেন।”
============

Post a Comment

0 Comments