[PDF] নিবেদিতা নিবেদিতা – ডঃ দীপক চন্দ্র

~ নিবেদিতা নিবেদিতা  ~

ডঃ দীপক চন্দ্র

[PDF] নিবেদিতা নিবেদিতা – ডঃ দীপক চন্দ্র

দৃষ্টিকোণ


মার্গারেট এলিজাবেথ নােবলের ভারত আগমনের শতবর্ষ পূর্ণ হল ১৯৯৮-তে। তার ঐতিহাসিক পদার্পণের শুভক্ষণটি স্মরণীয় করে রাখার ইচ্ছেয় শত বছরের সূচনায় আয়াল্যান্ড দুহিতা মার্গারেট এলিজাবেথ নােবলকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানাের উদ্দেশ্যেই তার সমস্যাসঙ্কুল সংঘাতমুখর জীবনকাহিনী নিয়ে ফিকশনধর্মী জীবনী উপন্যাস রচনার পরিকল্পনা করেছিলাম। মার্গারেট যে দেশকালের মধ্যে বড় হয়েছেন, সেই পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে একজন মানুষকে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য চারপাশের মানুষ, ঘটনা, আত্মীয়, বন্ধু ও পরিবেশের সঙ্গে অবিরাম লড়াই করতে হয়। সেই জীবনবৃত্তান্ত এই উপন্যাসকে ফিকশনধর্মী করে তুলেছে। এটা সাধারণ জীবনীগ্রন্থ নয়, লড়াকু মানুষের উপন্যাসধর্মী জীবনবৃত্তান্ত।
বলাবাহুল্য, গত বছর ২৮শে জানুয়ারিতে প্রথম পর্ব “নিবেদিত মার্গারেট” প্রকাশিত হয়। শতবর্ষের শুভারম্ভের দিনেই মার্গারেটের ভারত আগমনকে অভিনন্দিত করি ‘নিবেদিত মার্গারেট’ দিয়ে। তার আগমনের শততম বৎসর পূর্ণ হল এই বছরে। সেই উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পর্ব ‘নিবেদিত নিবেদিতা' প্রকাশিত হল। দ্বিতীয় পর্বের সময়কাল ১৮৯৮-এর জানুয়ারি থেকে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত। ভারতের উদ্দেশে রওনা হওয়ার জন্য যে-দিন লন্ডনের টিলবারি ডক থেকে মােম্বাসা জাহাজে উঠলেন সেদিন থেকে বেলুড়ে ব্রহ্মচর্যব্রতে দীক্ষিত হওয়ার দিন পর্যন্ত মােট ৮৪ দিনের ঘটনা এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। এটি কোনাে জীবনীগ্রন্থ নয়। জীবনের গল্প। জীবনের ধারাবাহিকতা আছে, কিন্তু সন-তারিখ মিলিয়ে নয়। জীবনের ফিকশন সৃষ্টি করতে যখন যেমন দরকার হয়েছে সেইভাবে আগে-পরে করে নিতে হয়েছে।
মার্গারেট ইংলন্ড থেকে এলেন আর নিবেদিতা হয়ে গেলেন, মােটেই তা নয়। তবে তিনি নিবেদিত হয়েছিলেন। প্রথম পর্বে নিবেদিত জীবনের ঘটনা। অর্থাৎ নিবেদিতা হওয়ার আগের জীবন। ইংলন্ডে বিবেকানন্দের বক্তৃতায় আকৃষ্ট হয়ে তাকে জীবনের পথপ্রদর্শকরূপে গ্রহণ করে ভারতে এসেছিলেন। দ্বিতীয় পর্বে মার্গারেটের ভারত আগমনের বৃত্তান্ত।
বিবেকানন্দের সান্নিধ্য ও সাহচর্য এবং তার পাশে থেকে নিজের কর্মক্ষেত্র গড়ে নেওয়ার বাসনা নিয়ে কার্যত মার্গারেট ভারতে এলেন। এর মধ্যে ছিল মার্গারেটের সুগভীর প্রেম। সেই অয়ন পথটি জেনে-বুঝেই বিবেকানন্দ সপ্রেমে তাকে ভারতের কাজের জন্য আহ্বান করেছিলেন। তাঁর আহ্বানের ভেতর মুক্ত দৃপ্ত মহাপ্রেমের হাতছানি ছিল। প্রেমপ্রদীপ্ত মহাজীবনের আকণ্ঠ তৃষ্ণা নিয়ে মার্গারেট ভারতে রওনা হয়েছিলেন বললে ভুল বলা হবে না।
দ্বিতীয়পর্বে “নিবেদিত নিবেদিতা”-য় আত্মানুসন্ধানের পথ ধরেই মার্গারেট ভারতে এলেন। তার মূলে ছিল এক অব্যক্ত প্রেম।” স্বামীজির বুকেও ছিল তার ফলুধারা। পাছে ফোয়ারার মত ফিকি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ে তাই এক কঠোর সংযমের ঘেরাটোপের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন। সেখানে মার্গারেটের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ভালােবাসার জোরেই সুদূর ইংলন্ড থেকে মার্গারেটকে ডাকতে পেরেছিলেন। মার্গারেটের মধ্যেও ছিল ভালােবাসার জোর। সেই জোরেই অন্য বিদেশিনীদের থেকে তিনি ছিলেন আলাদা। মার্গারেট নিজের পথ নিজে তৈরি করেছেন। কোনাে বাধা মানেননি তিনি। বােধ হয় মার্গারেটের জীবনদেবতাই মার্গারেটকে তার অভিলষিত পথে নিজের মত করে টেনে নিয়ে গেছেন। মার্গারেট যা করেছে বিবেকানন্দের মন পাওয়ার জন্য করেছে। তাকে জয় করাই ছিল মার্গারেটের লক্ষ্য। তাই বােধ হয় বিবেকানন্দ নিজেকে তার কাছ থেকে সর্বদা দূরে সরিয়ে রাখতেন। মার্গারেট ছিল তার ভয় ও দুর্ভাবনা। এক ধরনের বিরূপতা, বিতৃষ্ণা তার আচরণে প্রকাশ পেত। নিজেকেই কষ্ট দিতেন। সেই ভয়ংকর কষ্টের কোনাে দোসর ছিল না তাঁর। মার্গারেটেরও এক অশান্ত অস্থিরতার মধ্যে কাটত। তাদের উভয়ের সব দ্বন্দ্ব ছিল নিজের সঙ্গে নিজের। এই মানসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের সূত্র ধরেই মার্গারেটের ভারত-অন্বেষা এবং জীবন অন্বেষণ। বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে নিজের অগােচরে মার্গারেট একটু একটু করে নিবেদিতা হয়ে উঠেছিল। মনেপ্রাণে সম্পূর্ণ ভারতীয় এবং একজন যথার্থ হিন্দু না হওয়া পর্যন্ত স্বামীজি অপেক্ষা করেছেন। স্বামীজি জানতেন মার্গারেট যত উপেক্ষা ঔদাসীন্য অবহেলা পাবে ততই তার মনের মত হয়ে ওঠার জন্য এবং তাকে জয় করার উন্মাদনায় নিজেকে ভেঙে ভেঙে টুকরাে টুকরাে করে এক অন্য মানবীতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। অনেক দুঃখ, কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে, ত্যাগ স্বীকার করে তবেই নিবেদিতপ্রাণ মিস্ নােবলের উত্তরণ হল নিবেদিতায়। তার মধ্যে প্রেমের আনন্দ ছিল মার্গারেটের। পবিত্র প্রেমকে মার্গারেট শুরুর পাদপদ্মে নিবেদন করেছে অর্ঘ্যরূপে। প্রেম হল প্রাণের পূর্ণ এবং সুস্থ প্রকাশ। প্রকাশ উদ্বেল জীবনীশক্তির। প্রেমই মাগারেটের ব্যক্তিত্বকে এক নতুনমাত্রা দিয়েছে। সেই মুক্তদৃপ্ত মহাপ্রেমের অঙ্গীকারই মার্গারেটকে নিবেদিতায় রূপান্তরিত করল।
বিবেকানন্দ এবং মার্গারেটের না-বলা প্রেমের অভিব্যক্তির নবনির্মাণ এই গ্রন্থের মূল্যবান প্রাপ্তি। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, মানুষের যা কিছু ত্যাগ এবং নিবেদন তা তার শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালােবাসার জন্য। একেকজনের ভালােবাসা মানুষের প্রতি একেকরকম শ্রদ্ধায় ভালােবাসায় এবং ভক্তিতে মহিমময় হয়ে ওঠে। প্রেম ছাড়া তা কখনই হতে পারে না। বােধ হয়, বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার মত ব্যক্তিরাই পারে এমন শান্ত, স্নিগ্ধ ভালােবাসতে। এই প্রেমে দাহ নেই কোনাে, নিবেদনে শান্তি ও সুখ আছে। আছে বিশ্বস্ততা। সেই আরাত্রিক পবিত্র অপার্থিব প্রেমের তীব্র ভালােবাসা তাদের পরস্পরের প্রতি অনুগত ও বাধ্য রেখেছিল। এই প্রেমের কোনাে ছবি গাঢ় রঙে আঁকা নেই কোথাও। আমার বইতে কল্পনার রঙে সে-ছবি আঁকা হলেও প্রকৃত ঘটনা সত্যকে কোথাও অতিক্রম করার চেষ্টা নেই। বরং বলা যায়, জীবনীকারদের বর্ণনাগুলি রেখা ও রঙের ব্যবহারে যেরূপ হতে পারত তারই সম্ভাব্য সাদা-কালাে, রঙিন ছবি ঘটনাকে প্রত্যক্ষ ও জীবন্ত করে তুলবে। সংলাপে বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যকে ব্যবহার করেছি। গ্রন্থটি পাঠকপাঠিকাদের দ্বারা সমাদৃত হলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।
শুভায় ভবতু
ড. দীপক চন্দ্র

Read PDF Online

Post a Comment

0 Comments