তৃতীয় খণ্ড ~পঞ্চম ভাগ ~শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-শ্রীম কথিত
পঞ্চম ভাগ 

তৃতীয় খণ্ড 

তৃতীয় খণ্ড  ~পঞ্চম ভাগ ~শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত

==========

প্রথম পরিচ্ছেদ

১৮৮২, ২৬শে নভেম্বর
মণি মল্লিকের ব্রাহ্মোৎসবে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতায় শ্রীযুক্ত মণিলাল মল্লিকের সিন্দুরিয়াপটীর বাটীতে ভক্তসঙ্গে শুভাগমন করিয়াছিলেন। সেখানে ব্রাহ্মসমাজের প্রতি বৎসর উৎসব হয়। বৈকাল, বেলা ৪টা হইবে। এখানে আজ ব্রাহ্মসমাজের সাংবাৎসরিক উৎসব। (২৬শে) নভেম্বর, ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দ। শ্রীযুক্ত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ও অনেকগুলি ব্রাহ্মভক্ত আর শ্রীপ্রেমচাঁদ বড়াল ও গৃহস্বামীর অন্যান্য বন্ধুগণ আসিয়াছেন। মাস্টার প্রভৃতি সঙ্গে আছেন।

শ্রীযুক্ত মণিলাল ভক্তদের সেবার জন্য অনেক আয়োজন করিয়াছেন। তিনি অদ্যকার উপাসনা করিবেন। তিনি এখনও গৈরিকবস্ত্র ধারণ করেন নাই।

কথক মহাশয় প্রহ্লাদচরিত্র-কথা বলিতেছেন। পিতা হিরণ্যকশিপু হরির নিন্দা ও পুত্র প্রহ্লাদকে বারবার নির্যাতন করিতেছেন। প্রহ্লাদ করজোড়ে হরির নিকট প্রার্থনা করিতেছেন আর বলিতেছেন, “হে হরি, পিতাকে সুমতি দাও।” ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই কথা শুনিয়া কাঁদিতেছেন। শ্রীযুক্ত বিজয় প্রভৃতি ভক্তেরা ঠাকুরের কাছে বসিয়া আছেন। ঠাকুরের ভাবাবস্থা হইয়াছে।

[শ্রীবিজয় গোস্বামী প্রভৃতি ব্রাহ্মভক্তদিগকে উপদেশ — ঈশ্বর দর্শন ও আদেশপ্রাপ্তি, তবে লোকশিক্ষা ]

কিয়ৎক্ষণ পরে বিজয়াদি ভক্তদিগকে বলিতেছেন, “ভক্তিই সার। তাঁর নামগুণকীর্তন সর্বদা করতে করতে ভক্তিলাভ হয়। আহা! শিবনাথের কি ভক্তি! যেন রসে ফেলা ছানাবড়া।

“এরকম মনে করা ভাল নয় যে, আমার ধর্মই ঠিক, আর অন্য সকলের ধর্ম ভুল। সব পথ দিয়েই তাঁকে পাওয়া যায়। আন্তরিক ব্যাকুলতা থাকলেই হল। অনন্ত পথ — অনন্ত মত।”

“দেখ! ঈশ্বরকে দেখা যায়। ‘অবাঙ্মনসোগোচর’ বেদে বলেছে: এর মানে বিষয়াসক্ত মনের অগোচর। বৈষ্ণবরচণ বলত, তিনি শুদ্ধ মন, শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর।১ তাই সাধুসঙ্গ, প্রার্থনা, গুরুর উপদেশ এই সব প্রয়োজন। তবে চিত্তশুদ্ধি হয়। তবে তাঁর দর্শন হয়। ঘোলা জলে নির্মলি ফেললে পরিষ্কার হয়। তখন মুখ দেখা যায়। ময়লা আরশিতে ও মুখ দেখা যায় না।

“চিত্তশুদ্ধির পর ভক্তিলাভ করলে, তবে তাঁর কৃপায় তাঁকে দর্শন হয়। দর্শনের পর আদেশ পেলে তবে লোকশিক্ষা দেওয়া যায়। আগে থাকতে লেকচার দেওয়া ভাল নয়। একটা গানে আছে:

ভাবছো কি মন একলা বসে,
অনুরাগ বিনে কি চাঁদ গৌর মিলে।
মন্দিরে তোর নাইকে মাধব,
পোদো শাঁক ফুঁকে তুই করলি গোল।
তায় চামচিকে এগারজনা,
দিবানিশি দিচ্ছে থানা।

“হৃদয়মন্দিরে আগে পরিষ্কার রাখতে হয়; ঠাকুর প্রতিমা আনতে হয়; পূজার আয়োজন করতে হয়। কোন আয়োজন নাই, ভোঁ ভোঁ করে শাঁক বাজানো, তাতে কি হবে?”

এইবার শ্রীযুক্ত বিজয় গোস্বামী বেদীতে বসিয়া ব্রাহ্মসমাজের পদ্ধতি অনুসারে উপাসনা করিতেছেন; উপাসনান্তে তিনি ঠাকুরের কাছে আসিয়া বসিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (বিজয়ের প্রতি) — আচ্ছা, তোমরা অত পাপ পাপ বললে কেন? একশোবার “আমি পাপী” “আমি পাপী” বললে তাই হয়ে যায়। এমন বিশ্বাস করা চাই যে, তাঁর নাম করেছি — আমার আবার পাপ কি? তিনি আমাদের বাপ-মা; তাঁকে বল যে, পাপ করেছি, আর কখনও করব না। আর তাঁর নাম কর, তাঁর নামে সকলে দেহ-মন পবিত্র কর — জিহ্বাকে পবিত্র কর।

১ মন এব মনুষ্যাণাং বন্ধমোক্ষয়োঃ ৷

বন্ধায় বিষয়াসঙ্গি মোক্ষে নির্বিষয়ং স্মৃতমিতি ৷৷ — (মৈত্রায়ণী উপনিষদ্‌ — ৬।৩৪)
===========

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

১৮৮২, ১৪ই ডিসেম্বর

বাবুরাম প্রভৃতির সঙ্গে, ফ্রি উইল সম্বন্ধ কথা — তোতাপুরীর আত্মহত্যার সঙ্কল্প

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে বৈকাল বেলা নিজের ঘরে পশ্চিমের বারান্দায় কথা কহিতেছেন। সঙ্গে বাবুরাম, মাস্টার, রামদয়াল প্রভৃতি। ডিসেম্বর, ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দ। বাবুরাম, রামদয়াল ও মাস্টার আজ রাত্রে থাকিবেন। শীতের (বড়দিনের) ছুটি হইয়াছে। মাস্টার আগামী কল্যও থাকিবেন। বাবুরাম নূতন নূতন আসিয়াছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) — ঈশ্বর সব করছেন এ-জ্ঞান হলে তো জীবন্মুক্ত। কেশব সেন শম্ভু মল্লিকের সঙ্গে এসেছিল, আমি তাকে বললাম, গাছের পাতাটি পর্যন্ত ঈশ্বরের ইচ্ছা ভিন্ন নড়ে না। স্বাধীন ইচ্ছা (Free will) কোথায়? সকলই ঈশ্বরাধীন। ন্যাংটা অত বড় জ্ঞানী গো, সে-ই জলে ডুবতে গিছল। এখানে এগার মাস ছিল; পেটের ব্যারাম হল, রোগের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে গঙ্গাতে ডুবতে গিছল! ঘাটের কাছে অনেকটা চড়া, যত যায় হাঁটু জলের চেয়ে আর বেশি হয় না; তখন আবার বুঝলে, বুঝে ফিরে এল। আমার একবার খুব বাতিক বৃদ্ধি হয়েছিল, তাই গলায় ছুরি দিতে গিছলুম। তাই বলি, “মা, আমি যন্ত্র, তুমি যন্ত্রী; আমি রথ, তুমি রথী; যেমন চালাও তেমনি চলি — যেমন করাও তেমনি করি।”

ঠাকুরের ঘরের মধ্যে গান হইতেছে। ভক্তেরা গান গাহিতেছেন:

১।
হৃদি-বৃন্দাবনে বাস যদি কর কমলাপতি।
ওহে ভক্তিপ্রিয়, আমার ভক্তি হবে রাধাসতী ৷৷
মুক্তি কামনা আমারি, হবে বৃন্দে গোপনারী,
দেহ হবে নন্দের পুরী, স্নেহ হবে মা যশোমতী ৷৷
আমায় ধর ধর জনার্দন, পাপভার গোবর্ধন,
কামাদি ছয় কংসচরে ধ্বংস কর সম্প্রতি ৷৷
বাজায়ে কৃপা বাঁশরি, মন ধেনুকে বশ করি,
তিষ্ঠ হৃদিগোষ্ঠে পুরাও ইষ্ট এই মিনতি ৷৷
আমার প্রেমরূপ যমুনাকূলে, আশা বংশী বটমূলে,
স্বদাসভেবে সদয়ভাবে সতত কর বসতি —
যদি বল রাখাল-প্রেমে বন্দী থাকি ব্রজধামে,
তবে জ্ঞানহীন রাখাল তোমার দাস হবে হে দাশরথি ৷৷

২।
আমার প্রাণ-পিঞ্জরের পাখি গাওনারে।
ব্রহ্ম-কল্পতরুমূলে বসেরে পাখি, বিভুগুণ গাও দেখি (গাও গাও)
আর ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ, সুপক্ক ফল খাওনা রে ৷৷

নন্দন বাগানের শ্রীনাথ মিত্র বন্ধুগণ সঙ্গে আসিয়াছেন। ঠাকুর তাঁহাকে দেখিয়া বলিতেছেন, “এই যে এঁর চক্ষু দিয়া ভিতরটা সব দেখা যাচ্ছে। সার্সীর দরজার ভিতর দিয়ে যেমন ঘরের ভিতরকার জিনিস সব দেখা যায়।” শ্রীনাথ, যজ্ঞনাথ এঁরা নন্দন বাগানের ব্রাহ্মপরিবারভুক্ত। ইঁহাদের বাটীতে প্রতি বৎসর ব্রাহ্মসমাজের উৎসব হইত। উৎসবদর্শন করিতে ঠাকুর পরে গিয়াছিলেন।

সন্ধ্যার পর ঠাকুরবাড়িতে আরতি হইতে লাগিল। ঘরে ছোট খাটটিতে বসিয়া ঠাকুর ঈশ্বরচিন্তা করিতেছেন। ক্রমে ভাবাবিষ্ট হইলেন। ভাব উপশমের পর বলিতেছেন, “মা ওকেও টেনে নাও। ও অত দীনভাবে থাকে। তোমার কাছে আসা যাওয়া করছে।”

ঠাকুর ভাবে বাবুরামের কথা কি বলিতেছেন? বাবুরাম, মাস্টার, রামদয়াল প্রভৃতি বসিয়া আছেন। রাত্রি ৮টা-৯টা হইবে। ঠাকুর সমাধিতত্ত্ব বলিতেছেন। জড়সমাধি, চেতনসমাধি, স্থিতসমাধি, উন্মনাসমাধি।

[বিদ্যাসাগর ও চেঙ্গিস খাঁ — ঈশ্বর কি নিষ্ঠুর?শ্রীরামকৃষ্ণের উত্তর]

সুখ-দুঃখের কথা হইতেছে। ঈশ্বর এত দুঃখ কেন করেছেন?

মাস্টার — বিদ্যাসাগর অভিমান করে বলেন, “ঈশ্বরকে ডাকবার আর কি দরকার! দেখ চেঙ্গিস খাঁ যখন লুটপাট আরম্ভ করলে তখন অনেক লোককে বন্দী করলে; ক্রমে প্রায় এক লক্ষ বন্দী জমে গেল। তখন সেনাপতিরা এসে বললে মহাশয়, এদের খাওয়াবে কে? সঙ্গে এদের রাখলে আমাদের বিপদ। কি করা যায়? ছেড়ে দিলেও বিপদ। তখন চেঙ্গিস খাঁ বললেন, তাহলে কি করা যায়। ওদের সব বধ কর। তাই কচাকচ করে কাটবার হুকুম হয়ে গেল। এই হত্যাকাণ্ড তো ঈশ্বর দেখলেন? কই একটু নিবারণ তো করলেন না। তা তিনি থাকেন থাকুন, আমার দরকার বোধ হচ্ছে না। আমার তো কোন উপকার হল না!”

শ্রীরামকৃষ্ণ — ঈশ্বরের কার্য কি বুঝা যায়, তিনি কি উদ্দেশ্যে কি করেন? তিনি সৃষ্টি, পালন, সংহার সবই করছেন। তিনি কেন সংহার করছেন আমরা কি বুঝতে পারি? আমি বলি, মা, আমার বোঝবারও দরাকার নাই, তোমার পাদপদ্মে ভক্তি দিও। মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য এই ভক্তিলাভ। আর সব মা জানেন। বাগানে আম খেতে এসেছি; কত গাছ, কত ডাল, কত কোটি পাতা — এ-সব বসে বসে হিসাব করবার আমার কি দরকার! আমি আম খাই, গাছপাতার হিসাবে আমার দরকার নাই।

ঠাকুরের ঘরের মেঝেতে আজ রাত্রে বাবুরাম, মাস্টার ও রামদয়াল শয়ন করিলেন।

গভির রাত্রি, ২টা-৩টা হইবে। ঠাকুরের ঘরে আলো নিভিয়া গিয়াছে। তিনি নিজে বিছানায় বসিয়া ভক্তদের সহিত মাঝে মাঝে কথা কহিতেছেন।

[শ্রীরামকৃষ্ণ ও বাবুরাম, মাস্টার প্রভৃতি — দয়া ও মায়া — কঠিন সাধন ও ঈশ্বরদর্শন]

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টার প্রভৃতি ভক্তদের প্রতি) — দেখ, দয়া আর মায়া এ-দুটি আলাদা জিনিস। মায়া মানে আত্মীয়ে মমতা; যেমন বাপ-মা, ভাই-ভগ্নী, স্ত্রী-পুত্র, এদের উপর ভালবাসা। দয়া সর্বভূতে ভালবাসা; সমদৃষ্টি। কারু ভিতর যদি দয়া দেখ যেমন বিদ্যাসাগরের, সে জানবে ঈশ্বরের দয়া। দয়া থেকে সর্বভূতের সেবা হয়। মায়াও ঈশ্বরের। মায়া দ্বারা তিনি আত্মীয়দের সেবা করিয়ে লন। তবে একটি কথা আছে; মায়াতে অজ্ঞান করে রাখে, আর বদ্ধ করে। কিন্তু দয়াতে চিত্তশুদ্ধি হয়। ক্রমে বন্ধন মুক্তি হয়।

“চিত্তশুদ্ধি না হলে ভগবান দর্শন হয় না। কাম, ক্রোধ, লোভ — এ-সব হয় করলে তবে তাঁর কৃপা হয়; তখন দর্শন হয়। তোমাদের অতি গুহ্যকথা বলছি, কাম জয় করবার জন্য আমি অনেক কাণ্ড করেছিলাম। এমন কি আনন্দ আসনের চারিদকে ‘জয় কালী’ ‘জয় কালী’ বলে অনেকবার প্রদক্ষিণ করেছিলাম। আমার দশ-এগার বৎসর বয়সে যখন ও-দেশে ছিলুম, সেই সময়ে ওই অবস্থাটি (সমাধি অবস্থা) হয়েছিল; মাঠ দিয়ে যেতে যেতে যা দর্শন করলাম তাতে বিহ্বল হয়েছিলাম। ঈশ্বরদর্শনের কতরগুলি লক্ষণ আছে। জ্যোতি দেখা যায়, আনন্দ হয়। বুকের ভিতর তুবড়ির মতো গুরগুর করে মহাবায়ু ওঠে।”

পরদিন বাবুরাম, রামদয়াল বাড়ি ফিরিয়া গেলেন। মাস্টার সেইদিনও রাত্রি ঠাকুরের সঙ্গে অতিবাহিত করলেন। সেদিন তিনি ঠাকুরবাড়িতেই প্রসাদ পাইলেন।
============

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

১৮৮২, ১৪ই ডিসেম্বর

দক্ষিণেশ্বরে মারোয়াড়ী ভক্তগণসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

বৈকাল হইয়াছে। মাস্টার ও দু-একটি ভক্ত বসিয়া আছেন। কতকগুলি মারোয়াড়ী ভক্ত আসিয়া প্রণাম করিলেন। তাঁহারা কলিকাতায় ব্যাবসা করেন। তাঁহারা ঠাকুরকে বলিতেছেন, আপনি আমাদের কিছু উপদেশ করুন। ঠাকুর হাসিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মারোয়াড়ী ভক্তদের প্রতি) — দেখ, “আমি আর আমার” এ-দুটি অজ্ঞান। হে ঈশ্বর, তুমি কর্তা আর তোমার এই সব এর নাম জ্ঞান। আর ‘আমার’ কেমন করে বলবে? বাগানের সরকার বলে, আমার বাগান, কিন্তু যদি কোন দোষ করে তখন মনিব তাড়িয়া দেয়, তখন এমন সাহস হয় না যে, নিজের আমের সিন্দুকটা বাগান থেকে বের করে আনে। কাম, ক্রোধ আদি যাবার নয়; ঈশ্বরের দিকে মোড় ফিরিয়ে দাও। কামনা, লোভ করতে হয় তো ঈশ্বরকে পাবার কামনা, লোভ কর। বিচার করে তাদের তাড়িয়ে দাও। হাতি পরের কলাগাছ খেতে গেলে মাহুত অঙ্কুশ মারে।

“তোমরা তো ব্যবসা কর, ক্রমে ক্রমে উন্নতি করতে হয় জানো। কেউ আগে রেড়ির কল করে, আবার বেশি টাকা হলে কাপড়ের দোকান করে। তেমনি ঈশ্বরের পথে এগিয়ে যেতে হয়। হল, মাঝে মাঝে দিন কতক নির্জনে থেকে বেশি করে তাঁকে ডাকলে।

“তবে কি জানো? সময় নাহলে কিছু হয় না। কারু কারু ভোগকর্ম অনেক বাকি থাকে। তাই জন্য দেরিতে হয়। ফোঁড়া কাঁচা অবস্থায় অস্ত্র করলে হিতে বিপরীত হয়। পেকে মুখ হলে তবে ডাক্তার অস্ত্র করে। ছেলে বলেছিল, মা, এখন আমি ঘুমুই আমার বাহ্যে পেলে তখন তুমি তুল। মা বললে, বাবা, বাহ্যেতেই তোমায় তুলবে, আমায় তুলতে হবে না।” (সকলের হাস্য)

[মারোয়াড়ী ভক্ত ও ব্যবসায়ে মিথ্যাকথা — রামনাম কীর্তন]

মারোয়াড়ী ভক্তেরা মাঝে মাঝে ঠাকুরের সেবার জন্য মিষ্টান্নাদি দ্রব্য আনেন, ফলাদি থাল মিছরি ইত্যাদি। থাল মিছরিতে গোলাপ জলের গন্ধ। ঠাকুর কিন্তু সেই সব জিনিস প্রায় সেবা করেন না। বলেন, ওদের আনেক মিথ্যাকথা কয়ে টাকা রোজগার করতে হয়। তাই উপস্থিত মারোয়াড়ীদের কথাচ্ছলে উপদেশ দিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — দেখ, ব্যবসা করতে গেলে সত্যকথার আঁট থাকে না। ব্যবসায় তেজী মন্দি আছে। নানকের গল্পে আছে যে তিনি বললেন, অসাধুর দ্রব্য ভোজন করতে গিয়ে দেখলুম যে, সে-সব রক্ত মাখা হয়ে গেছে। সাধুদের শুদ্ধ জিনিস দিতে হয়। মিথ্যা উপায়ে রোজগার করা জিনিস দিতে নাই। সত্যপথে ঈশ্বরকে পাওয়া যায়।১

সর্বদা তাঁর নাম করতে হয়। কাজের সময় মনটা তাঁর কাছে ফেলে রাখতে হয়। যেমন আমার পিঠে ফোঁড়া হয়েছে, সব কাজ করছি, কিন্তু মন ফোঁড়ার দিকে রয়েছে। রামনাম করা বেশ। যে রাম দশরথের ছেলে; আবার জগৎ সৃষ্টি করেছেন; আর সর্বভূতে আছেন। আর অতি নিকটে আছেন। অন্তরে বাহিরে।

“ওহি রাম দশরথকী বেটা,
ওহি রাম ঘট ঘটমে লেটা,
ওহি রাম জগৎ পশেরা,
ওহি রাম সব সে নিয়ারা।”

১ সত্যেন লভ্যস্তপসা হ্যেষ আত্মা, সম্যগ্‌জ্ঞানেন ব্রহ্মর্য্যেণ নিত্যম্‌।       [মুণ্ডকোপনিষদ্‌ — ৩/১/৫]

সত্যমেব জয়তে নানৃতম্‌।                                           [মুণ্ডকোপনিষদ্‌ — ৩/১/৬]
============

Post a Comment

0 Comments