ত্রিংশ খণ্ড ~চতুর্থ ভাগ ~শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-শ্রীম কথিত

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-শ্রীম কথিত
চতুর্থ ভাগ 

ত্রিংশ খণ্ড 
শ্যামপুকুর বাটীতে হরিবল্লভ নরেন্দ্র, মিশ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে

ত্রিংশ খণ্ড ~চতুর্থ ভাগ ~শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত-শ্রীম কথিত

=======

প্রথম পরিচ্ছেদ

শ্রীযুক্ত বলরামের জন্য চিন্তা — শ্রীযুক্ত হরিবল্লভ বসু
শ্রীরামকৃষ্ণ শ্যামপুকুরের বাটীতে ভক্তসঙ্গে চিকিৎসার্থ বাস করিতেছেন। আজ শনিবার। আশ্বিন, কৃষ্ণা অষ্টমী তিথি, ১৬ই কার্তিক। ৩১শে অক্টোবর, ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ। বেলা নয়টা।
এখানে ভক্তেরা দিবারাত্রি থাকেন — ঠাকুরের সেবার্থ! এখনও কেহ সংসার ত্যাগ করেন নাই।
বলরাম সপরিবারে ঠাকুরের সেবক। তিনি যে বংশে জন্মিয়াছেন, সে অতি ভক্তবংশ। পিতা বৃদ্ধ হইয়াছেন, বৃন্দাবনে একাকী বাস করেন — তাঁহাদের প্রতিষ্ঠিত শ্রীশ্রীশ্যামসুন্দরের কুঞ্জে। তাঁহার পিতৃব্যপুত্র শ্রীযুক্ত হরিবল্লভ বসু ও বাটীর অন্যান্য সকলেই বৈষ্ণব।
হরিবল্লভ কটকের প্রধান উকিল। পরমহংসদেবের কাছে বলরাম যাতায়াত করেন — বিশেষতঃ মেয়েদের লইয়া যান — শুনিয়া বিরক্ত হইয়াছেন। দেখা হইলে, বলরাম বলিয়াছিলেন, তুমি তাঁহাকে একবার দর্শন কর — তারপর যা হয় বলো!
আজ হরিবল্লভ আসিয়াছেন, তিনি ঠাকুরকে দর্শন করিয়া অতি ভক্তিভাবে প্রণাম করিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — কি করে ভাল হবে! — আপনি কি দেখছো, শক্ত ব্যামো?
হরিবল্লভ — আজ্ঞা, ডাক্তারেরস বলতে পারেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — মেয়েরা পায়ের ধুলা লয়। তা ভাবি একরূপে তিনিই (ঈশ্বর) ভিতরে আছেন — হিসাব আনি।
হরিবল্লভ — আপনি সাধু! আপনাকে সকলে প্রণাম করবে, তাতে দোষ কি?
শ্রীরামকৃষ্ণ — সে ধ্রুব, প্রহ্লাদ, নারদ, কপিল, এরা কেউ হলে হত। আমি কি! আপনি আবার আসবেন।
হরি — আজ্ঞা, আমাদের টানেই আসব — আপনি বলছেন কেন।
হরিবল্লভ বিদায় লইবেন — প্রণাম করিতেছেন। পায়ের ধুলা লইতে যাইতেছেন — ঠাকুর পা সরাইয়া লইতেছেন। কিন্তু হরিবল্লভ ছাড়িলেন না — জোর করিয়া পায়ের ধুলা লইলেন।
হরিবল্লভ গাত্রোত্থান করিলেন। ঠাকুর যেন তাঁহাকে খাতির করিবার জন্য দাঁড়াইলেন। বলিতেছেন, “বলরাম অনেক দুঃখ করে। আমি মনে কল্লাম, একদিন যাই — গিয়ে তোমাদের সঙ্গে দেখা করি। তা আবার ভয় হয়! পাছে তোমরা বল, একে কে আনলে!”
হরি — ও-সব কথা কে বলেছে। আপনি কিছু ভাববেন না।
হরিবল্লভ চলিয়া গেলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — ভক্তি আছে — তা না হলে জোর করে পায়ের ধুলা নিলে কেন?
“সেই যে তোমায় বলেছিলাম, ভাবে দেখলাম ডাক্তার ও আর-একজনকে, — এই সেই আর-একজন। তাই দেখ, এসেছে।”
মাস্টার — আজ্ঞে, ভক্তিরই ঘর।
শ্রীরামকৃষ্ণ — কি সরল!
ডাক্তার সরকারের কাছে ঠাকুরের অসুখের সংবাদ দিবার জন্য মাস্টার শাঁখারিটোলায় আসিয়াছেন। ডাক্তার আজ আবার ঠাকুরকে দেখিতে যাইবেন।
ডাক্তার ঠাকুরের ও মহিমাচরণ প্রভৃতি ভক্তদের কথা বলিতেছেন।
ডাক্তার — কই, তিনি (মহিমাচরণ) সে বইতো আনেন নাই — যে বই আমাকে দেখাবেন বলেছিলেন! বললে, ভুল হয়েছে। তা হতে পারে — আমারও হয়।
মাস্টার — তাঁর বেশ পড়াশুনা আছে।
ডাক্তার — তাহলে এই দশা!
ঠাকুরের সম্বন্ধে ডাক্তার বলিতেছেন, “শুধু ভক্তি নিয়ে কি হবে — জ্ঞান যদি না থাকে।”
মাস্টার — কেন, ঠাকুর তো বলেন — জ্ঞানের পর ভক্তি। তবে তাঁর ‘জ্ঞান, ভক্তি’ আর আপনাদের ‘জ্ঞান, ভক্তি’র মানে অনেক তফাত।
“তিনি যখন বলেন — ‘জ্ঞানের পর ভক্তি’ তার মানে — তত্ত্বজ্ঞানের পর ভক্তি, ব্রহ্মজ্ঞানের পর ভক্তি — ভগবানকে জানার পর ভক্তি। আপনাদের জ্ঞান মানে সেন্স্‌ নলেজ্‌ (ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে পাওয়া জ্ঞান।) প্রথমটি not verifiable by our standard; তত্ত্বজ্ঞান ইন্দ্রিয়লভ্য জ্ঞানের দ্বারা ঠিক করা যায় না। দ্বিতিয়টি — verifiable (জড়জ্ঞান)।”
ডাক্তার চুপ করিয়া, আবার অবতার সম্বন্ধে কথা কহিতেছেন।
ডাক্তার — অবতার আবার কি? আর পায়ের ধুলো লওয়া কি!
মাস্টার — কেন, আপনি তো বলেন একস্‌পেরিমেন্ট্‌ সময় তাঁর সৃষ্টি দেখে ভাব হয়, মানুষ দেখলে ভাব হয়। তা যদি হয়, ঈশ্বরকে কেন না মাথা নোয়াব? মানুষের হৃদয় মধ্যে ঈশ্বর আছেন।
“হিন্দুধর্মে দেখে সর্বভূতে নারায়ণ! এটা তত আপনার জানা নাই। সর্বভূতে যদি থাকেন তাঁকে প্রণাম করতে কি?
“পরমহংসদেব বলেন, কোনও কোনও জিনিসে তিনি বেশি প্রকাশ। সূর্যের প্রকাশ জলে, আরশিতে। জল সব জায়গায় আছে — কিন্তু নদীতে, পুষ্করিণীতে, বেশি প্রকাশ। ঈশ্বরকেই নমস্কার করা হয় — মানুষকে নয়। God is God — not, man is God.
“তাঁকে তো রীজ্‌নিং (সামান্য বিচার) করে জানা যায় না — সমস্ত বিশ্বাসের উপর নির্ভর। এই সব কথা ঠাকুর বলেন।”
আজ মাস্টারকে ডাক্তার তাঁহার রচিত একখানি বই উপহার দিলেন —
Physiological Basis of Psychology — ‘as a token of brotherly regards’.
===========

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

শ্রীরামকৃষ্ণ ও Jesus Christ — তাঁহাতে খ্রীষ্টের আবির্ভাব
ঠাকুর ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন। বেলা এগারটা। মিশ্র নামক একটি খ্রীষ্টান ভক্তের সহিত কথা কহিতেছেন। মিশ্রের বয়ঃক্রম ৩৫ বৎসর হইবে। মিশ্র খ্রীষ্টানবংশে জন্মিয়াছেন। যদিও সাহেবের পোশাক, ভিতরে গেরুয়া আছে। এখন সংসারত্যাগ করিয়াছেন। ইঁহার জন্মস্থান পশ্চিমাঞ্চলে। একটি ভ্রাতার বিবাহের দিনে তাঁহার এবং আর একটি ভ্রাতার একদিনে মৃত্যু হয়। সেই দিন হইতে মিশ্র সংসারত্যাগ করিয়াছেন। তিনি কোয়েকার্‌ সম্প্রদায়ভুক্ত।
মিশ্র — ‘ওহি রাম ঘট্‌ ঘটমে লেটা।’
শ্রীরামকৃষ্ণ ছোট নরেনকে আস্তে আস্তে বলিতেছেন — যাহাতে মিশ্রও শুনিতে পান — ‘এক রাম তাঁর হাজার নাম।’
“খ্রীষ্টানরা যাঁকে God বলে, হিন্দুরা তাঁকেই রাম, কৃষ্ণ, ঈশ্বর — এই সব বলে। পুকুরে অনেকগুলি ঘাট। একঘাটে হিন্দুরা জল খাচ্ছে, বলছে জল; ঈশ্বর। খ্রীষ্টানেরা আর-একঘাটে খাচ্ছে, — বলছে, ওয়াটার; গড্‌ যীশু। মুসলমানেরা আর-একঘাটে খাচ্ছে — বলছে, পানি; আল্লা।”
মিশ্র — মেরির ছেলে Jesus নয়। Jesus স্বয়ং ঈশ্বর।
(ভক্তদের প্রতি) — “ইনি (শ্রীরামকৃষ্ণ) এখন এই আছেন — আবার এক সময়ে সাক্ষাৎ ঈশ্বর।
“আপনারা (ভক্তেরা) এঁকে চিনতে পাচ্ছেন না। আমি আগে থেকে এঁকে দেখেছি — এখন সাক্ষাৎ দেখছি। দেখেছিলাম — একটি বাগান, উনি উপরে আসনে বসে আছেন; মেঝের উপর আর-একজন বসে আছেন, — তিনি তত advanced (উন্নত নন।)
“এই দেশে চারজন দ্বারবান্‌ আছেন। বোম্বাই অঞ্চলে তুকারাম ও কাশ্মীরে রবার্ট মাইকেল; — এখানে ইনি; — আর পূর্বদেশে আর-একজন আছেন।”
শ্রীরামকৃষ্ণ — তুমি কিছু দেখতে-টেকতে পাও?
মিশ্র — আজ্ঞা, বাটীতে যখন ছিলাম তখন থেকে জ্যোতিঃদর্শন হত। তারপর যীশুকে দর্শন করেছি। সে-রূপ আর কি বলব! — সে সৌন্দর্যের কাছে কি স্ত্রীর সৌন্দর্য!
কিয়ৎক্ষণ পরে ভক্তদের সঙ্গে কথা কহিতে কহিতে মিশ্র জামা পেন্টলুন খুলিয়া ভিতরের গেরুয়ার কৌপীন দেখাইলেন।
ঠাকুর বারান্দা হইতে আসিয়া বলিতেছেন — “বাহ্যে হল না — এঁকে (মিশ্রকে) দেখলাম, বীরের ভঙ্গী করে দাঁড়িয়ে আছে।”
এই কথা বলিতে বলিতে ঠাকুর সমাধিস্থ হইতেছেন। পশ্চিমাস্য হইয়া দাঁড়াইয়া সমাধিস্থ।
কিঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া মিশ্রকে দেখিতে দেখিতে হাসিতেছেন।
এখনও দাঁড়াইয়া। ভাবাবেশে মিশ্রকে শেক্‌ হ্যাণ্ড (হস্তধারণ) করিতেছেন ও হাসিতেছেন। হাত ধরিয়া বলিতেছেন, “তুমি যা চাইছ তা হয়ে যাবে।”
ঠাকুরের বুঝি যীশুর ভাব হইল! তিনি আর যীশু কি এক?
মিশ্র (করজোড়ে) — আমি সেদিন থেকে মন, প্রাণ, শরীর, — সব আপনাকে দিয়েছি!
[ঠাকুর ভাবাবেশে হাসিতেছেন]
ঠাকুর উপবেশন করিলেন। মিশ্র ভক্তদের কাছে তাঁহার পূর্বকথা সব বর্ণনা করিতেছেন। তাঁহার দুই ভাই বরের সভায় সামিয়ানা চাপা পড়িয়া, মানবলীলা সম্বরণ করিলেন, — তাহাও বলিলেন।
ঠাকুর মিশ্রকে যত্ন করিবার কথা ভক্তদের বলিয়া দিলেন।
[নরেন্দ্র, ডা: সরকার প্রভৃতি সঙ্গে কীর্তনানন্দে ]
ডাক্তার সরকার আসিয়াছেন। ডাক্তারকে দেখিয়া ঠাকুর সমাধিস্থ। কিঞ্চিৎ ভাব উপশমের পর ঠাকুর ভাবাবেশে বলিতেছেন — “কারণানন্দের পর সচ্চিদানন্দ। — কারণের কারণ!”
ডাক্তার বলিতেছেন, হাঁ!
শ্রীরামকৃষ্ণ — বেহুঁশ হই নাই।
ডাক্তার বুঝিয়াছেন যে, ঠাকুরের ঈশ্বরের আবেশ হইয়াছে। তাই বলিতেছেন — “না তুমি খুব হুঁশে আছ!”
ঠাকুর সহাস্যে বলিতেছেন —
গান – সুরাপান করি না আমি, সুধা খাই জয়কালী বলে,
মন মাতালে মাতাল করে, মদ মাতালে মাতাল বলে।
গুরুদত্ত গুড় লয়ে, প্রবৃত্তি তায় মশলা দিয়ে (মা)
জ্ঞান শুঁড়িতে চুয়ার ভাঁটি, পাল করে মোর মন মাতালে।
মূলমন্ত্র যন্ত্র ভরা, শোধন করি বলে তারা,
প্রসাদ বলে এমন সুরা, খেলে চতুর্বর্গ মেলে।
গান শুনিয়া ডাক্তার ভাবাবিষ্টপ্রায় হইলেন। ঠাকুরেরও আবার ভাবাবেশ হইল। ভাবে ডাক্তারের কোলে চরণ বাড়াইয়া দিলেন।
কিয়ৎক্ষণ পরে ভাব সম্বরণ হইল, — তখন চরণ গুটাইয়া লইয়া ডাক্তারকে বলিতেছেন — “উহ্‌! তুমি কি কথাই বলেছ! তাঁরই কোলে বসে আছি, তাঁকে ব্যারামের কথা বলব না তো কাকে বলব। — ডাকতে হয় তাঁকেই ডাকব!”
এই কথা বলিতে বলিতে ঠাকুরের চক্ষু জলে ভরিয়া গেল।
আবার ভাবাবিষ্ট। — ভাবে ডাক্তারকে বলিতেছেন — “তুমি খুব শুদ্ধ! তা না হলে পা রাখতে পারি না!” আবার বলিতেছেন। “শান্ত ওহি হ্যায় যো রাম-রস চাখে!
“বিষয় কি? — ওতে আছে কি? — টাকা-কড়ি, মান, শরীরের সুখ — এতে আছে, কি? রামকো যো চিনা নাই দিল্‌ চিনা হ্যায় সো কেয়া রে।”
এত অসুখের পর ঠাকুরের ভাবাবেশ হইতেছে দেখিয়া ভক্তেরা চিন্তিত হইয়াছেন। ঠাকুর বলিতেছেন, “ওই গানটি হলে আমি থামব; — হরিরস মদিরা।”
নরেন্দ্র কক্ষান্তরে ছিলেন, তাঁকে ডাকানো হইল। তিনি তাঁহার দেবদুর্লভ কণ্ঠে গান শুনাইতেছেন:
হরিরসমদিরা পিয়ে মম মানস মাতো রে।
(একবার) লুটায়ে অবনীতল হরিহরি বলি কাঁদো রে।
গভীর নিনতদে হরিনামে গগন ছাও রে
নাচো হরি বলে, দুবাহু তুলে, হরিনাম বিলাও রে।
হরিপ্রেমানন্দরসে অনিদিন ভাসো রে,
গাও হরিনাম হও পূর্ণকাম, নীচ বাসনা নাশো রে!
শ্রীরামকৃষ্ণ — আর সেইটি? ‘চিদানন্দসিন্ধুনীরে?’
নরেন্দ্র গাইতেছেন:
(১) – চিদানন্দ সিন্ধুনীরে প্রেমানন্দের লহরী,
মহাভাব রসলীলা কি মাধুরী মরি মরি।
মহাযোগে সব একাকার হইল, দেশকাল ব্যবধান সব ঘুচিল রে,
এখন আনন্দে মাতিয়া, দু বাহু তুলিয়া বল রে মন হরি হরি।
(২) – চিন্তয় মন মানস হরি চিদ্‌ঘন নিরঞ্জন।
ডাক্তার একাগ্রমনে শুনিতেছেন। গান সমাপ্ত হইলে বলিতেছেন, ‘চিদানন্দসিন্ধুনীরে, ওইটি বেশ!’ ডাক্তারের আনন্দ দেখিয়া ঠাকুর বলিতেছেন — “ছেলে বলেছিল, ‘বাবা, একটু (মদ) চেখে দেখ তারপর আমায় ছাড়তে বল তো ছাড়া যাবে।’ বাবা খেয়ে বললে, ‘তুমি বাছা ছাড় আপত্তি নাই কিন্তু আমি ছাড়ছি না।’ (ডাক্তার ও সকলের হাস্য)
“সেদিন মা দেখালে দুটি লোককে। ইনি তার ভিতর একজন। খুব জ্ঞান হবে দেখলাম, — কিন্তু শুষ্ক। (ডাক্তারকে, সহাস্যে) কিন্তু রোসবে।”
ডাক্তার চুপ করিয়া আছেন।
=========

Post a Comment

0 Comments