[PDF] নিবেদিতা স্মৃতি – বিশ্বনাথ দে

~  নিবেদিতা স্মৃতি  ~

বিশ্বনাথ দে 

[PDF] নিবেদিতা স্মৃতি – বিশ্বনাথ দে


এই প্রসঙ্গে 

ভগিনী নিবেদিতা ভারতমাতার উদ্দেশ্যে স্বামী বিবেকানন্দের এক অনুপম উপহার। স্বামী বিবেকানন্দ যেন তাকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও সভ্যতার দৃঢ়মূল থেকে ছিন্ন করে এনে রােপণ করেছিলেন ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার ভূমিতে।
ভগিনী নিবেদিতা এমনই এক মহাপ্রাণ রমনী, যিনি বিদেশিনী হয়েও ভারতকে মাতৃভূমি জ্ঞান করে তার সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। জন্ম তার সুদূর আয়াণ্ডে, ইংলণ্ডে লালিত-পালিত আর ভারত ছিল তাঁর কর্মক্ষেত্র। জীবন ও কর্মের  দিক দিয়ে তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর আদর্শবাদ ও আত্মােৎসর্গ তাঁকে শাশ্বত জীবনের অধিকারী করেছিল।
ভগিনী নিবেদিতার পিতা-মাতা ছিলেন ধর্মপ্রাণ খৃষ্টান। জন্মক্ষণেই তাঁর মা তাঁকে উৎসর্গ করেন ভগবৎ-সেবায়। ভগিনী নিবেদিতা স্বয়ং ছিলেন আত্মত্যাগ সত্যানুরাগ প্রভৃতি সদগুণে ভূষিতা। অপেক্ষা ছিল শুধু এক মহৎ প্রাণের জ্বলন্ত স্পর্শ যে স্পর্শে তার অন্তরে আত্মত্যাগের সুপ্তবহ্নি জ্বলে উঠবে। ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে লণ্ডনে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে সাক্ষাতে হলাে তারই সূচনা। 
‘হিন্দুযোগী’র সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের দ্বারা প্রভাবিত না হবার জন্য সতর্কতা অবলম্বন এবং নিজের প্রবল স্বাতন্ত্র্যবােধ সত্ত্বেও হিন্দুযােগীর চরিত্র ও শিক্ষার মহত্ত্ব তাকে অভিভূত করে। তাই তিনি নিজেই এই সাক্ষাতের পরিণাম সম্বন্ধে লিখেছেন, “ইনি যে বীরােচিত উপাদানে গঠিত ছিলেন, তা আমি হৃদয়ঙ্গম করেছিলাম, এবং তাঁর স্বজাতিপ্রেমের নিকট আমি সম্পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করতে চেয়েছিলাম।’
ভগিনী নিবেদিতা তাঁর গুরুর নিকট যে গভীর আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করেন, তাঁর উপর গুরুর অগাধ বিশ্বাস এবং যিনি তাঁকে কন্যারূপে গ্রহণ করেন সেই শ্রীশ্রীমায়ের আশীর্বাদ—এই সকলের ফলেই তাঁর আদর্শের পথে, সাধনার পথে দৃঢ় পদক্ষেপ করা সম্ভব হয়েছিল। নানাভাবে তিনি দুর্ভাগা পরাধীন ভারতের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। ভারতের তরুণ সম্প্রদায়কে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন দেশপ্রেমে, আহ্বান করেছিলেন ভারতমাতার মুক্তি-সাধনের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে। ভারতীয় নারীর শিক্ষা ও উন্নতিকল্পে তিনি অনলস পরিশ্রম করে গেছেন। তদানীন্তন ভারতের বহু জ্ঞানী-গুণী-প্রতিভাবান মনীষী-ব্যক্তির উপর তিনি আপন প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সাংবাদিকতা, রাজনীতি—সর্বক্ষেত্রেই ছিল ভগিনী নিবেদিতার অবাধ পদসঞ্চার।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও ভগিনী নিবেদিতা সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তার রাজনীতি ছিল আক্রমণশীল এবং আবেদন-নিবেদনমূলক নরমপন্থী রাজনীতি তিনি সহ্য করতে পারতেন না। তিনি ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দেব বন্ধু, কারণ তিনি যথার্থই উপলব্ধি করেছিলেন যে, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ভারতকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ভারতবর্ষে ধর্মের পুনঃ প্রতিষ্ঠা হবে যখন সমগ্র জাতি কোন দুর্বলতা, দুর্ভাগ্য অথবা অভিযােগের দাবীতে নয়, পরন্তু এক মহান জাতীয়তা, এক উত্তরাধিকারের বিরাট সদাজাগ্রত চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হবে’–এই ছিল তার স্বপ্ন।
ভগিনী নিবেদিতার জীবন ছিল কঠোর দুঃখ, পরীক্ষা ও কৃচ্ছসাধনাপূর্ণ। তিনি বলেছেন, সাহসের সঙ্গে বরণ কর তােমার নিজের অন্ধকার, তােমার দীপালােক বহুজনের অন্ধকার দূর করে আনন্দ দান করবে। তুচ্ছতম কাজটিও আনন্দের সঙ্গে সম্পাদন কর, বিসর্জন দাও উচ্চপদের আকাঙ্ক্ষা।
তাই, আজ আমাদের এই আকাঙ্ক্ষাসর্বস্ব, অবিন্যস্ত, এলােমেলাে জীবনযাত্রার দিনে ‘নিবেদিতা-স্মৃতি’ গ্রন্থ প্রকাশ করার প্রয়ােজনবােধ দেখা গেছে। এই মহিয়সী নারীর মহান নিবেদিত জীবন দেশের তরুণ সম্প্রদায়কে অনুপ্রাণিত করুক—এই শুধু কামনা।

বিশ্বনাথ দে

Read PDF Online

Post a Comment

0 Comments