[ebook] বিবেকানন্দ ও আজকের সমাজ – মিত্র কৌটিল্য

 ~ বিবেকানন্দ ও আজকের সমাজ  ~

মিত্র কৌটিল্য

[ebook] বিবেকানন্দ ও আজকের সমাজ – মিত্র কৌটিল্য

ভুমিকা 


স্বামী বিবেকানন্দের সমাজবিজ্ঞানী রূপটি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ ক্রমশই বাড়ছে। অনেক লেখা বের হচ্ছে নানান পত্র-পত্রিকায়। বিভিন্ন গবেষক ও লেখক এ বিষয়ে আলোচনা করলেও একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে কোনও মডেল (model) আশ্রয় না করে এ-ধরনের আলোচনা কি বিজ্ঞানসম্মত ? মার্কস থেকে শুরু করে রামকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, আদ্রে বেঁতে প্রমুখ সমাজবিজ্ঞানীরা নিজস্ব মডেল খাড়া করে আলোচনা করেছেন। ফলে তাদের যুক্তি-পরম্পরা বুঝতে পাঠকদের সুবিধা হয়। সমাজবিজ্ঞানী বিবেকানন্দের আলোচনায় এ-রকম কোন মডেল আছে কি? স্বামীজী নিজে কোন মডেল সরাসরি লিপিবদ্ধ করেননি, তবে তাঁর লেখা ও বক্তৃতার মধ্য দিয়ে একটি বিজ্ঞানসম্মত ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায়। সমাজের বিশ্লেষণে এই মডেল প্রয়োগ করলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার সম্ভাব্য উত্তরও খুঁজে পাওয়া যায়।
স্বামীজীর লেখার মধ্য থেকে এই মডেল আবিষ্কারের চেষ্টা করা হয়েছে ষষ্ঠ অধ্যায়ে।
বর্তমান সমাজের আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই আধুনিক বিশ্বমানসের চেহারাটা ধরা হয়েছে প্রথম অধ্যায়ে। প্রাগৈতিহাসিক মানুষ এবং বিংশ শতাব্দীর মানুষের মধ্যে কি কোনও মূলসূত্র আছে যা তার মৌল মানসিকতাকে প্রকাশ করে। এই মৌল মানসিকতাকে আবিষ্কার করে দেখানাে হয়েছে সভ্যতার পরিবর্তনের ফলে বর্তমান পৃথিবীতে কোন বৈশিষ্ট্যগুলি প্রধান হয়ে উঠেছে। মানুষের বিভিন্ন কর্ম প্রয়াস, তার বিদ্রোহ-বিপ্লব, ব্যক্তিত্বের বিকাশে কোন্ দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়েছে সেগুলি আলোচনা করে স্বামীজীর প্রাসঙ্গিকতা দেখানাে হয়েছে।
আধুনিক ভারতীয় সমাজের যে জ্বলন্ত সমস্যা গুলো - বিচ্ছিন্নতাবাদ, জাতীয় সংহতির দুর্বলতা, নারী-অবমাননা, পণপ্রথা, নব্য ধনী মানসিকতায় প্রকোপ, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘু-প্রতিক্রিয়া, বৈষম্য ইত্যাদি—এগুলির পরিপ্রেক্ষিতে স্বামীজীর উক্তি পর্যালোচনা করা হয়েছে দ্বিতীয় অধ্যায়। পাঠক লক্ষ্য করবেন যে পাঞ্জাব-সমস্যা, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, গোর্খাল্যান্ড ঝাড়খণ্ড বিতর্ক, আসাম সমস্যা, তপশীল সম্প্রদায়ের জন্য আসন-সংরক্ষণের বিরুদ্ধে গুজরাট মহারাষ্ট্র প্রদেশে বিক্ষোভ, সাধু হত্যার ব্যাপকতা ইত্যাদির মূল কারণ অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা আছে এখানে। জাতিগত - ধর্মীয় ভাষাগত সংখ্যালঘুদের মানসিকতা ও সংখ্যাগরিষ্ঠদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে সহানুভূতিয় সঙ্গে দেখতে চেষ্টা করেছি বিবেকানন্দ-মননালােকে।
স্বামীজীর চিন্তাকে এরপর নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাষ্ট্রনৈতিক পর্যায়ে। মার্কস ও স্বামীজী উভয়েই রাষ্ট্রের শ্ৰেণী:বিশ্লেষণের ওপর জোর দিয়েছেন যদিও এ প্রসঙ্গে উভয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। বর্তমান ভারতের ক্ষেত্রে এই শ্রেণী-বিশ্লেষণের প্রয়োগ কোনও বিবেকানন্দ-গবেষক কয়েছেন কিনা তা চোখে পড়েনি। মার্কস যেখানে স্টেট ইভিওলজীর ওপর জোর দিয়েছেন, সেখানে স্বামীজী স্টেট-ইভিওলজীর সঙ্গে সামাজমানসকেও যুক্ত করেছেন। বিবেকানন্দ মডেল প্রয়োগে বর্তমান ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক-সম্প্রদায় (তৃতীয় অধ্যায়ে) ও পশ্চিমবঙ্গের শাসক সম্প্রদায়ের (ষষ্ঠ অধ্যায়ে। শ্রেণী-বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিশ্লেষিত হয়েছে জনসাধারণের বা সমাজমানসের বর্তমান অবস্থা। বিবেকানন্দকে যারা সমাজ বিপ্লবী হিসাবে প্রকাশ করতে চান, তাদের পক্ষে এ-ধরণের বিশ্লেষণ দরকার কারণ এর মধ্য দিয়েই বেরিয়ে আসবে বিপ্লবের পথনির্দেশ।
চতুর্থ অধ্যায়ে বিবেকানন্দ-মননালােকে আলােচনা করা হয়েছে মানুষ কেন যুগে-যুগে বিপ্লব করতে চায়। জনসাধারণই রাষ্ট্র গড়ে তোলে, আবার জনসাধারণই রাষ্ট্রের পরিবর্তন চায় কেন ? বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রকে বিশ্লেষণ করে দেখানাে হয়েছে এগুলির বৈশিষ্ট্য কি, ভিত্তি কি, রাষ্ট্র কিভাবে অনন্ত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, জনগণ কিভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রে পরিপ্রেক্ষিতে বিপ্লবের পথ বেছে নেয়।
মার্কস যেখানে অর্থনৈতিক বা বিষয়গত সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন, স্বামীজি সেখানে বিষয়ীগত সম্পর্ককেও সময় করে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা উপস্থাপিত করেছেন। ব্যক্তিমানস ও সমাজমানসের বিভিন্ন দিক-যার প্রতিফলন ঘটছে পারিবারিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক-রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষেত্রে তুলে ধরে পথ খোঁজার চেষ্টা হয়েছে পঞ্চম অধ্যায়ে।
অনেকেরই সাহায্য পেয়েছি বইটি লেখার সময়। প্রথমেই মনে পড়ছে বিপ্লবী সুনীল দাস ও বিজয় নাগের কথা যাঁরা ক্রমাগত তাড়া দিয়ে এটি লিখিয়ে নিয়েছেন। অমিত দাশ উদ্যোগ নিয়েছেন বই প্রকাশে। অজস্র কাজের মধ্যে থেকেও ডঃ সজল বসু  করেছেন এটিকে সম্পাদনা করে দিয়ে। এদের সবার কাছেই আমি ঋণী। কৃতজ্ঞতা জানাই প্রচ্ছদ শিল্পী জয়ন্ত ঘােষকে এবং প্রভাবতী প্রেসের কর্মীবৃন্দকে।
-মিত্র কৌটিল্য

Read PDF Online

Post a Comment

0 Comments